স্ত্রীকে তিনতলা বাড়ি ও ৪০ লাখ টাকা দিয়ে রাস্তায় স্বামী!

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : স্ত্রী সম্পর্ক করছেন অন্য পুরুষের সঙ্গে-এমন খবর কানে এলেও বিশ্বাস হয়নি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্য পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর গোপন ভিডিও দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ঢাকার অদূরে সাভারের বাসিন্দা বাদল মণ্ডল।

অভিযোগ উঠেছে, বাদলের মানসিক অবস্থার সুযোগ সুযোগ নিয়ে তার তিনতলা বাড়ি এবং নগদ ৪০ লাখ টাকা লিখে নিয়েছেন স্ত্রী। সেই টাকা নিয়ে বাদলকে তালাক দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু না, বাদলের কাছে স্ত্রী দাবি করেন, স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ তার নামে লিখে দিতে হবে।

সম্পদ লিখে না দিলে মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এই হুমকির পর নিরাপত্তা চেয়ে সাভার মডেল থানায় গত রোববার অভিযোগ দিয়েছেন বাদল মণ্ডল।

জানা গেছে, স্ত্রীর কাছে নিজের তিনতলা বাড়ি লিখে দিয়ে এবং জমানো ৪০ লাখ টাকা খুইয়ে এখন পথে পথে ঘুরছেন সাভারের নামাবাজার ডালপট্টি এলাকার এই দোকানি।

বাদল মণ্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী পরপুরুষে আসক্ত। বিষয়টি আগে থেকে শুনলেও আমি প্রমাণ না পেয়ে স্ত্রীকে কিছুই বলতে পারিনি। কিন্তু অন্য পুরুষের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্কের বেশ কয়েকটা ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তার সাবেক প্রেমিক ওই ভিডিও ছেড়ে দিয়েছে। এলাকার বহু মানুষের মোবাইলে সেই ভিডিও আছে।’

বাদল বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। আত্মহত্যার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলি। এ সময় সে (স্ত্রী) আমার কাছে বলে, ছেলে-মেয়ের দেখভালের জন্য বিনোদবাইদ এলাকার তিনতলা বাড়ি আর ৬০ লাখ টাকা দিলে ডিভোর্স নেবে। মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে, সবকিছু দিয়ে আত্মহত্যা করব ভেবেছিলাম। সে মোতাবেক তিনতলা বাড়ি আর ৪০ লাখ টাকা নগদ দিয়েছি। সে আমার কাছ থেকে স্ট্যাম্পে লিখে নিয়েছে যে, আরও ২০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য থাকব। সে মোতাবেক ২০ লাখ টাকা দিতেও রাজি ছিলাম। কিন্তু পরে সে দাবি করে, আমার স্থাবর-অস্থাবর সবকিছু দিয়ে দিতে হবে তাকে।’

বাদল মণ্ডল আরও বলেন, ‘সাভারের নামাবাজার ডালপট্টিতে আমার ডালের দোকান আছে। আমার মেয়ে ও ছেলেকে সাথে নিয়ে এসে সে আরো টাকার দাবিতে দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে আমার মোবাইল ও টাকা-পয়সা নিয়ে চলে গেছে। এছাড়া দোকানের গুরুত্বপূর্ণ খাতা টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আমাকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দিয়েছে। প্রাণের ভয় আর তার (স্ত্রীর) সেইসব ভিডিওর কারণে লজ্জা, সবমিলিয়ে এলাকায় আর ফিরতে পারছি না।

এ বিষয়ে বাদলের স্ত্রী কথা বলতে রাজি হননি। তার মেয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাবা নিজেই আমার মায়ের নামে বাড়ি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে এবং ৪০ লাখ টাকাও দিয়েছে। আরও ২০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা আছে। সেটা আমরা তার কাছ থেকে আদায় করব। এ ব্যাপারে স্ট্যাম্পে লেখাও আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মা আমাদের সব রকম স্বাধীনতা দেয়, যেটা বাবার কাছে কোনোদিনই পাইনি। আমি আর আমার ভাইয়ের সব চাওয়া মা পূরণ করে। মা যা-ই করুক না কেন, আমাদের সবসময় গুরুত্ব দেয়। সে কারণে আমরা মায়ের পক্ষে।’

এ বিষয়ে নামাবাজার ডালপট্টি এলাকার আনন্দময়ী ডাল মিলের ব্যবস্থাপক গোবিন্দ সাহা বলেন, ‘বাদল দাদার স্ত্রীর ভিডিওটা এখন অনেকেরই মোবাইলে মোবাইলে। বিষয়টা দেখে আমারই লজ্জা লাগে।’

ঠাকুর অ্যান্ড সাহা দোকানের মালিক নুকুল সাহা, মুন্না ডাল মিলের মো. আলম জানান, বাদল মণ্ডলের বাড়ি আর টাকাপয়সা তার বউ নিয়ে নিয়েছে। কয়েকদিন আগে দোকানের সামনে এসে তার স্ত্রী ভাঙচুর করেছে। বেশ কয়েকদিন ধরে বাদলকে আর এলাকায় দেখা যায়নি।

ডালপট্টি এলাকার আরও বেশ কয়েকজন দোকানি জানান, বাদল মণ্ডলের স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি সবারই জানা। বাজারেও এ নিয়ে হাঙ্গামা করে গেছে তার স্ত্রী। বাদলের জন্য খারাপ লাগাও প্রকাশ করেছেন তারা।

বাদল মণ্ডলের ভাই বিবেক মণ্ডল বলেন, ‘বাড়ি আর টাকা দিয়ে দেওয়ার পর আমার ভাই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। বহু বছর আমার সঙ্গে কথা না বললেও আত্মহত্যা করবে বলে শেষবার আমাকে জানাতে এসেছিল। আমরা সবাই বুঝিয়ে তাকে আত্মহত্যার পথ থেকে সরিয়ে এনেছি।’

Share