নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : সম্প্রতি আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনায় পরীমনিকেই দোষারোপ করছেন নারী উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারম্যান এবং বোটক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর। অভিযুক্ত আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের মতো মানুষ কিছুতেই পরীমনিকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে পারেন না বলে দাবি করেন তিনি। তবে মদ্যপ এই নায়িকাকে শাসন করতে চড়-থাপ্পর দেওয়া অন্যায় নয় বলেও মনে করেন হেলেনা জাহাঙ্গীর।
আইপি টিভি জয়যাত্রা টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ইস্যুতে দীর্ঘদিনের পরিচিত নাসির উদ্দিন মাহমুদের পক্ষে সাফাই গেয়ে নিজের ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করেন হেলেনা জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না এখানে ইনজাস্টিস হচ্ছে কি না। আমরা জাস্টিসের অপেক্ষায় আছি। নাসির সাহেব উনি চার-পাঁচবার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট উত্তরা ক্লাবের। আমি যতগুলো ক্লাবের সদস্য, উনি ততগুলো ক্লাবের সঙ্গে আছেন। উনার আচার-আচরণে কোনোদিনই আমরা খারাপ কিছু দেখিনি। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। বোট ক্লাবের মেম্বার আমি ছয় নম্বর,আমি ফাউন্ডার মেম্বার। আমি গুলশান ক্লাবের মেম্বার। নাসির ভাই আমার বাসায় এসেছেন, দাওয়াত খেয়েছেন। আমি কোনোদিন উনার চোখের নজর খারাপ দেখিনি।’
হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ছেলের বউসহ আমার ঘরে তিনটা মেয়ে আছে। মেয়েরা আমার ক্লাবের অ্যাসোসিয়েট মেম্বার। আমার মেয়েরা রাত আটটার পরে ঘরের বাইরে থাকুক আমি চাইব না। আমার বাসার সামনে গুলশান ক্লাব। ওরা কোনোদিন যায় না। ওরা বরং বান্ধবীদের বাসায় গেলে আমার এবং আমার স্বামীর তদারকিতে সাতটার মধ্যে বাসায় ফিরতে বাধ্য তারা। আমার ছেলের বয়স ২৩ হয়ে গেছে। আমার ছেলেকেও মধ্যরাতে ঘরের বাইরে থাকতে দেই না। আর একটা মেয়ে (পরীমনি), আমি মনে করি, নায়িকা-গায়িকা সবকিছু বাদে সে তো একটা মানুষ। সে তো একটা মেয়ে। সে রাত ১২টার সময় দুই গাড়ি ভরাট করে সেই কোথায় বোট ক্লাব, সেখানে কীভাবে যায়? আমার প্রশ্ন এটাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাকে যে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে কেউই কিন্তু দুই চোখে দেখেনি। আমরা যদি ১৫ সেকেন্ডের ভিডিওটা শুনি ভালো করে, সেখানে কিন্তু কোনো নারীর আওয়াজ আসেনি। যারা ক্লাবের মেম্বার না তারা তো ক্লাবে এন্ট্রিই না। ১১টার সময় ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। তারা ১১টার পরে গিয়ে কেন মদের বোতল চাইবে?’
একটা ধর্ষণ চেষ্টা হওয়া নারী, যাকে নাকি হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে সে মিডিয়ার সামনে হাসে কীভাবে- এই প্রশ্ন রেখে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দেখলাম ডিবি অফিসের সামনে যখন গেল (পরীমনি), ও ক্যামেরার সামনে কেমন মুচকি মুচকি হাসতেছিল। আমি ডিবিসি চ্যানেল না কোন চ্যানেলে দেখলাম, ওর হাসিটাকে ক্যাচ করেছে ক্যামেরা। একটা ধর্ষণ চেষ্টা হওয়া নারী যাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে সে এগুলো কেমনে করে! হাসতেছিল যা ফেসবুকে রেকর্ড আছে। নাম্বার টু, দুই কোটি টাকা যদি তার সাথে লেনদেন হয়েই থাকে,দুই কোটি টাকার জন্য যদি নাসির উদ্দিন এমন করে থাকে তাহলে সে নাসির উদ্দিনকে চেনেন না কেন? ফেসবুকে রংপুরের একজনকে দেখলাম বলল দুই কোটি টাকা চাওয়াতে তার সাথে এরকম হয়েছে। পরিমণি সেটা নাকি স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আমি শুনি নাই, আমি যেটা না শুনি না দেখি সেটা আমি বলতেও চাই না। একই কথা আরও একজন বলেছে, সে একজন বড় নায়িকা, পরিচিত মুখ।’
‘আমি বলছি যদি দুই কোটি টাকা নিয়েই থাকে তাহলে সে নাসির উদ্দিনকে চেনে না কেন! আবার আজ নিউজে দেখলাম ৫০ লাখ টাকা পেয়ে নাকি সে কন্ট্রাকে গিয়ে এ কাজ করেছে। আমি জানি না, নিউজ থেকে বলছি’ আরও যোগ করেন তিনি।
একটা মেয়ে কখনো রাতে বাইরে বের হতে পারে না- এ কথা উল্লেখ করে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি বাস্তবতা বলতে চাই যে, সবাই জানে আমার একটা স্টেটমেন্ট অনেক বড় বিষয় বাংলাদেশের জন্য, আমার ভক্ত সমর্থকদের জন্য। আমি বলব একটা মেয়ে কখনো রাতে বাইর হতে পারে না। সেটা হবে সবার আগে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, বিচার তো পরে। তাহলে নির্দোষ মানুষের উপর আনজাস্টিস হয়, এটা মানহানির মামলা কতটুকু বা কত টাকা হতে পারে। একটা মানুষ নাসির উদ্দিন যিনি একজন বড় মাপের ব্যবসায়ী তার সাথে…. এটা আমার সাথেও হতে পারে।’
নাসির উদ্দিনের ওপর অবিচার হতে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমার যারা ভক্ত আছেন তারা দেখেন করোনাকালীন সময়ে আমার উপর এরকম একটা অ্যাটাক আসছিল, আল্লাহ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার সাথে ছিলেন বলে তিনি আমায় চেনেন বলে আমি রক্ষা পেয়েছি। আমাকে কিন্তু সাবরিনা আর সাহেদের সাথে জড়িল আমাকে অ্যারেস্ট করতে একটা প্ল্যান চলছিল। মিডিয়াতে একটা বড় লেখাও আসছিল। মিডিয়া কী, সব আপনারা জানেন আমরাও জানি। সো ওই নিউজ অনেক ভাইরাল করছিল আমাকে যে আমি সাবরিনা সাহেদের সাথে জড়িত। আমার হাজব্যান্ড বলছে যে তুমি একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী তুমি কেন ম্যানেজিং ব্যবসার সাথে জড়িত হবা। দিস ইজ দ্য কোয়েশচেন, সো দিস ইজ মিডিয়া। মিডিয়া কাউকে ভালো করতে পারে, খারাপও করতে পারেন। মিডিয়ার কাছে অনুরোধ আপনারা সত্যটা তুলে ধরুন। একটা ভালো মানুষের উপর আনজাস্টিস হতে দেবেন না।’
দুর্নীতি দমন কমিশনকে পরীমনির সম্পদের হিসাব চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দুদক আমি দুদকের কাছে অনুরোধ করবো, তার যে সম্পদ আছে সে সম্পদের হিসাব ও জবাবদিহিতা চাইতে। অনেক বড় বড় নায়িকা নায়করা বলছেন যে তিনি সাড়ে তিন কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন কীভাবে। এমনও বলেছে যে সে এখন বনানীতে যে ফ্ল্যাটে থাকেন সেটা ২৫-৩০ কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাট। তার একটা সোফার দাম দেড়-দুই লাখ টাকা। সে প্রতি সপ্তাহ দুবাই যাচ্ছে, এখানে ওখানে যাচ্ছে এটা কীভাবে হয়। তাহলে নাসির উদ্দিনের পিছে লাগার তো কারণ নেই। আগে দেখুক, তারপর তাকে… আমার মনে হয় তার উপর জাস্টিস হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিডিয়ার সামনে পরিমণি বলেছে,যে তাকে মারধর করা হয়েছে। তো তাকে মারের চিহ্ন কোথায়? যেহেতু তার গায়ের রঙটা টকটকে ফর্সা। একটা চটকনা দিলে গালে দাগ পড়ে থাকার কথা। তার দাঁত নড়াটা কোথায়, সে তো হাসতেছে। আমরা ক্যামেরায় দেখছি সে হাসছে, তো ক্যামেরার সামনে দাঁত পড়লে হাসে কেমনে। উনি (নাসির উদ্দিন) দুটা চটকনা দিয়েছেন আমরা শুনেছি, তার চটকনা দেওয়ার জায়েজ ছিল তখন, আমি বলবো যে জায়েজ। কারণ আমি মেয়ে হিসেবে আমাকে যদি দিতো আমি মেনে নিতাম। কারণ মেয়েটা ওখানে গিয়ে বড় বড় মদের বোতল ভাঙছে, গ্লাস ভাঙছেন। যা ছিল সব নাকি ভাঙচুর করেছে, তখন নাসির উদ্দিন চটকনা দিয়েছিল। তাও ফেসবুক শোনা কথা। আর মেয়ে হিসেবে দিতেই পারে চটকনা, আমি বলছি বাবা হিসেবে মেয়েকে দিতেই পারে। আমি যখন বেশি পাগলামী করি আমার হাজব্যান্ড যদি আমায় দুটা চটকনা দেন, আমি কিন্তু সেটা মনে রাখব না। কারণ আমি পাগল হয়ে গেলে অনেক কিছুই করতে পারি। সে যখন ঢুকছিল তখনও নাকি সে ড্রাঙ্কই ছিল। যখন নাসির উদ্দিন… যে স্ট্যাটমেন্ট তিনি বলেছেন, সে প্রচুর ড্রাঙ্ক ছিল। বনানী থানায় ড্রিঙ্ক হাতে গেছে। এখন ঘটনার আড়ালে কি সেটা বের করবে ইনভেস্টিগেশন।’
হেলেনা জাহাঙ্গীর ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আইনের নিয়মকানুন তো নিশ্চই জানেন, আমার ভক্ত ফলোয়াররা জানেন, সারা বাংলাদেশের জনগণ জানেন। গণতন্ত্রের দেশ বাংলাদেশ দেশ। আইনের কিছু ধারা আছে, পাগলের কখনো মামলা নেওয়া হয় না, হবে না। যারা মদ্যপান করেন, মাতাল অবস্থায় যায় তাদের কখনো মামলা নেওয়া হয় না। কারণ মাতাল অবস্থায় অনেক কিছুই করতে পারে, মাতাল অবস্থায় যদি আদিম যুগে একটা মরা মানুষের সাথে জেনা করতে পারে তাহলে মদ্যপ ব্যক্তি মাতাল অবস্থায় অনেক কিছু করতে পারে। সে মামলা তো কখনো নেওয়া হবে না, ঠিক আছে। এজন্য মামলা নেওয়া হয়নি, সেখান থেকে তাকে এভারকেয়ার হসপিটালে পাঠানো হয়েছে। এটা বনানী থানার ওসির স্ট্যাটমেন্ট।’
ন্যায় বিচার চেয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটাকে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছেন, প্রশাসন দেখছে। তবে আমি চাই জাস্টিস, যেন ইনজাস্টিস না হয়। আমি সকলের কাছে বলব, সকল জনগণের কাছে বলব, প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, সরকার প্রধান ও সরকারের কাছে অনুরোধ পরীমনি কিন্তু মারা যায়নি, নির্যাতিত হয়নি ধর্ষিত হয়নি। একটা নির্দোষ মানুষের উপর যেন ইনজাস্টিস না হয়, এটা আমার অনুরোধ থাকবে। আমি ক্লাবের মেম্বার বলে না, আমি নাসির উদ্দিনের পরিচিত বলে না, আমি একজন জনগণ, একজন গণতন্ত্রের নাগরিক হিসেবে অনুরোধ করব একজন নির্দোষ মানুষের উপর যেন দোষ চাপিয়ে দেওয়া না হয়, সঠিক বিচার যেন করে। সঠিক জিনিস যেন বের করে।’
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুন উত্তরার কাছের বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন এই চিত্রনায়িকা। মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।