ল্যাথাম বাংলাদেশকে শুধু অপেক্ষাতেই রাখতে পারলেন


নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক : টম ল্যাথাম চেষ্টা করলেন শেষ পর্যন্ত। দারুণ এক ফিফটিতে নিউজিল্যান্ডকে আশা জোগাচ্ছিলেন তাদের অধিনায়ক। শেষ দিকে রানআউটের হাত থেকে বাঁচলেন, মোস্তাফিজুর রহমানের উপহার ‘বিমার’-এর সঙ্গে আদায় করলেন আরও চারটি রান। তবু বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষাটাই শুধু বাড়াতে পারলেন ল্যাথাম। ১৪১ রানের সম্বল নিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জিতেছে ৪ রানে। এ সিরিজের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো জয় ছিল না বাংলাদেশের, এবার কিউইদের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচও জেতা হয়ে গেল সাকিবদের।

রান তাড়া করতে নামা নিউজিল্যান্ডের প্রথম উইকেট আজ তৃতীয় ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। রচিন রবীন্দ্র সাকিবকে একটা ছয় মেরে বোলিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পরের বলেই সাকিবের প্রতিশোধ। বলা ভালো, রবীন্দ্রই উপহার দিলেন উইকেট। মারার চেষ্টা করলেও নিচু হওয়া বলে ব্যাট লাগাতে পারেননি, পা থেকে বল গেছে স্টাম্পে। পরের ওভারে মেহেদী হাসানের দারুণ এক আর্ম বলে স্টাম্পড হয়েছেন টম ব্লান্ডেল। ১৮ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড।

টম ল্যাথামের সঙ্গে উইল ইয়াংয়ের জুটি সে চাপ থেকে উদ্ধার করেছিল। পাওয়ার প্লেতে ২৮ রান তুললেও নিউজিল্যান্ড প্রথম ১০ ওভারে তুলেছিল ৫৭ রান। কিন্তু এরপরই পথ হারায় দলটি। ২৮ বলে ২২ রান করা ইয়াংকে ফিরিয়ে ল্যাথামের সঙ্গে তাঁর ৪৩ রানের জুটি ভেঙেছেন সাকিব। টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ উইকেটের লাসিথ মালিঙ্গার রেকর্ড ছুঁতে সাকিবের প্রয়োজন ছিল আর একটি উইকেট, কোল ম্যাকনকিকে এলবিডব্লু করেওছিলেন।

তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছেন ম্যাকনকি, সাকিবের অপেক্ষাও বেড়েছে। এর আগেই কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও হেনরি নিকোলস ফিরেছেন ৭ রানের ব্যবধানে। ডি গ্র্যান্ডহোম নাসুমকে, আর নিকোলস মেহেদীকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন। ম্যাকনকিকে নিয়ে এরপর লড়াই চালিয়ে গেছেন ল্যাথাম।

এলবিডব্লু থেকে রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন ল্যাথামও, তখন তাঁর রান ছিল ২৮। ল্যাথামের অবশ্য সেটাই প্রথম জীবন পাওয়া নয়। ৩৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর ১৯তম ওভারে রানআউট হতে পারতেন, তবে থ্রো গ্লাভসে নেওয়ার আগেই নুরুল হাসান স্টাম্প ভেঙে দেওয়ায় বেঁচে গেছেন আরেকবার।

শেষ ২৪ বলে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান। তবে পরের ৩ ওভারে উঠেছিল ২৮ রান। মোস্তাফিজুর রহমানের শেষ ওভারে ২০ রান প্রয়োজন থাকলেও নাটক বাকি ছিল একটু। শেষ ২ বলে ১৩ রান দরকার ছিল সফরকারীদের। পঞ্চম বলে মোস্তাফিজুর রহমানের হাত থেকে ফসকে গিয়ে বলটা হলো বিমার। সেটাতে আবার শেষ মুহূর্তে ব্যাট লাগিয়ে ফেলেন ল্যাথাম। পঞ্চম বলে লেগবাই থেকে দুই রান এলেও শেষ বলে আর নাটক হয়নি, ল্যাথাম নিতে পেরেছেন শুধু একটা সিঙ্গেলই। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক অপরাজিত ৪৯ বলে ৬৫ রান করে, তাঁর সঙ্গী ম্যাককনকি অপরাজিত ছিলেন ১২ বলে ১৫ রান করে।

এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ নিজেদের শেষ ৭ ইনিংসের মাঝে গড়েছে সর্বোচ্চ স্কোর। তামিম ইকবাল নেই, খেলবেন না বিশ্বকাপেও। বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির দিকে তাই বাড়তি নজর থাকাটাই স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে শুরু করে অবশ্য শুরুটা তেমন ভালো হচ্ছিল না বাংলাদেশের। আজ রানের দেখা পেয়েছেন লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম। দুজন মিলে ওপেনিং জুটিতে তুলেছেন ৫৯ রান।

পাওয়ার প্লেতে দুজন যোগ করেছিলেন ৩৬ রান, দশম ওভারে গিয়ে ভেঙেছে লিটন-নাঈমের জুটি। রচিন রবীন্দ্রকে একটা ছয় মারার পর বাঁক করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন লিটন, ব্যাটে লেগে বলটা এসেছে স্টাম্পে। এর আগে ২৯ বলে ৩৩ রান করেছেন এ ডানহাতি, ৩ চার ও ১ ছয়ে। অবশ্য শুরুতেই জীবন পেয়েছিলেন তিনি, কোল ম্যাকনকির বলে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলেছিলেন। তবে একেবারে সহজ ক্যাচটা ফেলেছেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম।

লিটনের উইকেটের ঠিক পরের বলে রবীন্দ্র নিয়েছেন মুশফিকুর রহিমের উইকেটও। ঝুলিয়ে দেওয়া বলে সামনে বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে মিস করে স্টাম্পড হয়েছেন মুশফিক। প্রথম ১০ ওভারে লিটন-মুশফিকের উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে ৬০ রান।

সাকিব নেমেই আক্রমণাত্মক ছিলেন, তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ম্যাকনকিকে তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে ধরা পড়েছেন ৬ বলে ১২ রান করে। সে ক্যাচটা অবশ্য একটু অদ্ভুতভাবে নিয়েছেন বেন সিয়ার্স। হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল শুরুতে বলটা, তবে এরপর পড়েছিল তাঁর ঊরুতে। সেটা অবশ্য মাটিতে পড়তে দেননি তিনি আর। বোলিংয়ে ফিরে রবীন্দ্র নিয়েছেন আরেকটি উইকেট। এক প্রান্তে সতর্ক ব্যাটিং করে যাওয়া নাঈম এবার তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে টম ব্লান্ডেলের হাতে ধরা পড়েছেন। রবীন্দ্র এদিন ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

আফিফ হোসেন সমানসংখ্যক বলে ৩ রান করেই ক্যাচ তুলেছেন এজাজ প্যাটেলের বলে। তবে নুরুল হাসানকে নিয়ে ২১ বলে ৩২ রানের জুটি গড়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের শেষ বলে হামিশ বেনেটের বলে উইল ইয়াংয়ের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়েছেন ৯ বলে ১৩ রান করা নুরুল। অন্যদিকে ম্যাচসেরা মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ৩২ বলে ৩৭ রানে, বাংলাদেশ অধিনায়ক ইনিংসে মেরেছেন ৫টি চার। নিউজিল্যান্ড এদিন খেলিয়েছে তিন পেসার। তবে অভিষেকে মাত্র ১ ওভারই বোলিং করেছেন ফাস্ট বোলার বেন সিয়ার্স, দিয়েছেন ১১ রান।

Share