বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, গত দেড় বছর ধরে অতিমারির কারণে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের দারিদ্র্য কিছুটা হলেও বেড়েছে। কর্মজীবী মানুষের উপার্জন হ্রাস পেয়েছে। এসব কারণেই পারিবারিক সহিংসতাগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে অপরাধপ্রবণতা বাড়ে-কমে। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখলাম, কীভাবে ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েছে। পরিসংখ্যানে এসেছে যে, ৭০ শতাংশ ডিভোর্স নারীরা দিয়েছেন। এর কারণও অনুসন্ধান করার প্রয়োজন রয়েছে। ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তাদের ভূমিকা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এই কর্মশালার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত এক জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনাকালে ৪৮ হাজার ২৩৩ জন নারী ও শিশু পারিবারিক ও অন্যান্য ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী ও ৬৭ শতাংশ শিশু রয়েছে। দেশের ৫৩ জেলায় ৬৫ হাজার মানুষের মধ্যে মুঠোফোনের মাধ্যমে এই জরিপ কার্যক্রম চালানো হয়। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সমন্বয়কারী রুমা সুলতানা এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, সরকারি আইনসহায়তা কার্যক্রমের পরিধি আরো বিস্তৃত করা দরকার। যেমন সমাজে স্বামী পরিত্যক্তা আছেন। ধর্ষণসহ অন্যান্য নির্যাতিত নারীকে তাত্ক্ষণিক চিকিত্সাসেবা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এই সেবা দেওয়াটাও লিগ্যাল এইড। এটা না দেওয়ার কারণে অনেক সময় সাক্ষ্য নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং এই বিষয়গুলো ধীরে ধীরে লিগ্যাল এইডে অন্তর্ভুক্ত করে এর পরিধি বাড়াতে হবে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত ১ লাখ ২ হাজার ৬৬ জনকে আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৮৭ জনকে মামলায় সহায়তা করা হয়েছে। ৪৯ হাজার ৯২৭ জনকে বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি সেবা দেওয়া হয়েছে। হটলাইনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়েছে ১৭ হাজার ৩২৮টি। মোট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯৮ জনকে আইনি সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, যখন কোনো উপায় থাকে না তখনই একজন নারী ডিভোর্স দিয়ে থাকেন। এজন্য একজন নারীকে নানা কথা শুনতে হয়। এ সময় সেই নারী অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানে ১৯টি জেলার জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এসব কর্মকর্তার মধ্যে অনেকেই তাদের জেলায় দেওয়া লিগ্যাল এইডের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।