কুষ্টিয়ায় ব্যক্তি মালিকানার জমিতে আশ্রায়ন প্রকল্প নির্মাণ অব্যাহত

নয়াবার্তা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার স্থানীয় প্রশাসন আইন আদালতকে উপেক্ষা করে ব্যক্তি মালিকানার ৮৭ শতাংশ জমি জবর দখল করে আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করেছে। প্রকল্প এলাকায় জমির মালিকানার দলিলাদী প্রদর্শণ করায় সহকারি কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যম্যান আদালত বসিয়ে সাতাত্তর বছর বয়সের এক বৃদ্ধ কৃষককে এক মাসের জেল দিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন উক্ত এলাকার ব্যক্তি মালিকানার আরো সম্পত্তি জবর দখলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে।

জমির মালিকরা অভিযোগ করেছেন, উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিজনগর গ্রামের মৃত গোলাম মন্ডলের ছেলে আতর আলী দিং এর মালিকানাধীন ১৩ একর ৮৯ শতাংশ জমি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত দাবি করে সরকারি আশ্রায়ন প্রকল্পের গৃহ নির্মাণ কাজ চলছে। এ ব্যাপারে জমির মালিক পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান বলেন, মিরপুর থানার কুড়িপোল বিজনগর মৌজার সিএস ২৬০ নং খতিয়ানের জমির পরিমাণ ১৩ একর ৮৯ শতাংশ। উক্ত জমির মধ্যে এসএ ৩৩০ খতিয়ানের রেকর্ডিও প্রজা আব্দুল আজিজ এর মাতা সাবিরন নেছা সিএস ২৬০ খতিয়ানের ২ আনা ১৩ গন্ডা ১ কড়া ১ ক্রান্তি অংশ অর্থাৎ ২ একর ৩২ শতাংশ সম্পত্তির মালিক। বিগত এসএ রেকর্ড আমলে ভুলক্রমে সমুদয় ১৩ একর ৮৯ শতাংশ সম্পত্তি সিএস প্রজা সাবিরন নেছার ওয়ারেশ আব্দুল আজিজ এর নামে রেকর্ড ভুক্ত হয়। ফলে উক্ত সম্পত্তির বৈধ ওয়ারিশগণ কুষ্টিয়ার প্রথম মুনছুপি আদালতে দেওয়ানী ২৪৪/৭৪ নং মোকাদ্দমা দায়ের করলে ৩০/৩২ বছর পূর্বেই প্রাথমিক ডিগ্রি ও সরেজমিনে মাপযোগান্তে চূড়ান্ত ডিগ্রী প্রাপ্ত হয়েছেন। উক্ত রায় ডিগ্রী অনুযায়ী সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস হতে নামজমা খারিজ পূর্বক সরকারি সেরেস্তায় খাজনাদি প্রদানের স্বত্তবান দখলকার আছেন।

জমির মালিক পক্ষের অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান বলেন, হঠাৎ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে মিরপুর উপজেলা ভূমি অফিসার সরেজমিনে এসে ৪টি দাগে লাল পতাকা পুতে দেন এবং জানান যে, সমুদয় জমি সরকারের। পরের দিন উক্ত ভূমির মালিকরা সমুদয় কাগজপত্রসহ ভূমি অফিসারের নিকট গেলে ভূমি অফিসার সঠিকভাবে কাগজপত্র না দেখে আদালতের রায় ডিগ্রীসহ সকল কাগজপত্র জাল বলে আখ্যায়িত করেন। অতঃপর স্থানীয় প্রশাসন প্রচুর ইট এনে জমির পার্শ্বে গাদা করে রাখে। এমতাবস্থায় গত ৭ মার্চ ইং তারিখে মোঃ আতর আলী দিং বাদী হয়ে কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ মিরপুর সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ৫৭/২০২২ নং মোকদ্দমা দায়ের করেন। এই মোকাদ্দমা দায়েরের পর স্থানীয় প্রশাসন উক্ত জমি হতে ইট উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে উক্ত জমিতে সরকারী আশ্রায়ন প্রকল্পের স্থাপনা তৈরীর কাজ বন্ধ রাখে। অতঃপর জেলা প্রশাসন প্রভাব বিস্তার করে নিন্ম আদালতে মামলা ঝুলিয়ে রেখে উক্ত জমিতে পুণরায় আশ্রায়ন প্রকল্পের স্থাপনা তৈরীর উদ্যোগ নিলে আতর আলী গত ২৫ মে সরেজমিনে মামলার কাগজপত্র দেখালে মিরপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঐদিন ঘটনাস্থলে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে মিরপুর মোবাইল কেস নং ১৩/২০২২ মামলা রুজু করে আতর আলীকে ১ মাসের জেল দেন। এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইত্যাবসরে স্থানীয় প্রশাসন আদালতে বিচারাধীন মামলা উপেক্ষা করে মিরপুর কুড়িপোল বিজনগর মৌজার ১৮৭০ এবং ১৮৭১ নং দাগের ব্যক্তি মালিকানার ৮৭ শতাংশ জমি জবর দখলে নিয়ে আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে। উপায়ান্তর না দেখে আতর আলী দিং কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতে মিস আপীল নং ৫১/২০২২ মোকাদ্দমা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা জজ ১ম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এই মোকাদ্দমায় নিয়েজিত এ্যাডভোকেট কমিশনার ইতিমধ্যে কমিশন প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন। এ্যাডভোকেট কমিশনারের স্বাক্ষীও শেষ হয়েছে। বর্তমানে আদালতে ১মাসের বন্ধ চলছে। আর এই অবসরে স্থানীয় প্রশাসন উক্ত বাদ বাকি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি জবর দখলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। জমির মালিকরা চলমান মামলায় আদালত থেকে মামলার আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি চেয়েও পাচ্ছেন না।

আশ্রায়ন প্রকল্পের নামে আইন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না রেখে ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তিতে অবৈধ ও জোরপূর্বক স্থাপনা তৈরীর অব্যাহত প্রচেষ্টায় উক্ত এলাকার জনসাধারণ আইন ও আদালতের প্রতি অসহায়ত্ব ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মামলার বাদী আতর আলী বলেন, জমি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় একটি মহল প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে ব্যক্তি মালিকানার জমিতে সরকারি আশ্রায়নের ঘর বানিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।

Share