স্কুল বন্ধ রেখে প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাতে গেছেন তিন উপজেলার শিক্ষকরা

নয়াবার্তা কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বিয়ের বৌভাত। এ আয়োজনে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে কুড়িগ্রামের তিনটি উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীকে। সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে ওই তিন উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন শিক্ষকরা। পাঠদান বন্ধ রেখেই রবিবার (৮ জানুয়ারি) মন্ত্রীর ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ কর্মচারীরা। অনুষ্ঠানে গেছেন জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারাও। ফলে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে তীব্র শীত উপেক্ষা করে যেসব শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসেছিল তাদের ক্লাস না করেই ফিরতে হয়েছে বাড়িতে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি ভিন্ন। তিনি জানিয়েছেন, শীতের কারণে প্রধান শিক্ষকরা তাদের ক্ষমতাবলে স্কুল ছুটি দিয়েছেন। এ ঘটনা শুনে নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। তার বাড়ি রৌমারী উপজেলায়। রবিবার প্রতিমন্ত্রীর রৌমারীস্থ বাসভবনে তার একমাত্র ছেলে সাফায়েত বিন জাকির সৌরভের বিবাহোত্তর বৌভাত অনুষ্ঠান ছিল।

রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে বন্ধ দেখা গেছে। অন্যান্য এলাকায়ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে সকাল সকাল পতাকা উত্তোলন করলেও শ্রেণিকক্ষ তালা মেরে রাখা হয়। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। দু’একজন শিক্ষককে পাওয়া গেলেও দেখা মেলেনি কোনো শিক্ষার্থীর।

জানা গেছে, অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের ‘বাধ্যতামূলক’ যেতে বলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

স্কুল বন্ধের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি শিক্ষক-কর্মচারীরা। অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি তারা।

শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, চিলমারী উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৯৩টি। রৌমারী উপজেলায় ১১৪টি এবং রাজীবপুর উপজেলায় ৫৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ সব বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয় প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠান ঘিরে। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সকালে এসে তারা জানতে পারে স্কুল বন্ধ। শিক্ষকরা বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবেন বলে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা দাওয়াতে যাবেন। এজন্য স্কুল বন্ধ। এছাড়াও বিয়ের উপহার কিনতে শিক্ষকদের জনপ্রতি ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ করে টাকা চাওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের টাকার পরিমাণ ধরা হয়েছে একটু বেশি।

এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে জানা যায়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলামও গেছেন বিয়ের দাওয়াতে। তাই তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, তিনি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে রয়েছেন। কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে জানতে চাইলে বলতে চাননি তিনি। তবে খোঁজ জানা গেছে, তিনি প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে গেছেন তিনি। সব শিক্ষক একসঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।

সব বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘প্রচন্ড শীতের কারণে প্রধান শিক্ষকরা তাদের ক্ষমতাবলে ছুটি দিয়েছেন। এটা দিতে পারেন। তাদের হাতে তিনদিনের ছুটি থাকে।’

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার কথা বলেছেন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। এটি তদন্ত করা হবে। সত্যতা মিললে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Share