নয়াবার্তা ডেস্ক : হিন্দুত্ববাদীদের কটাক্ষ করে পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ সম্মানপ্রাপ্ত ভারতের প্রবীণ ও বিশিষ্ট অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মোগলদের সবকিছুই যদি এত খারাপ, তাহলে তাজমহল, লাল কেল্লা বা কুতুব মিনার সাজিয়ে রাখা হয়েছে কেন? ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক।’
ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন প্রবীণ এ অভিনেতা। ওই সময় তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘লাল কেল্লাকে এত পবিত্র কেন মনে করা হয়? কেন ওই স্থাপত্যের এত গুরুত্ব? ওটা তো একজন মোগলের তৈরি।
‘এটা ঠিক, এ দেশের ইতিহাসে মোগলদের গৌরবান্বিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মাথায় তুলে নাচার যেমন প্রয়োজন নেই, তেমনি তাদের খলনায়ক বানানোরও দরকার নেই।’
বেসরকারি টেলিভিশন সংস্থা জি-৫-এর জন্য তৈরি ‘তাজ’ নামের একটি ওয়েব সিরিজে নাসিরউদ্দিন শাহ মোগল সম্রাট আকবরের চরিত্রে অভিনয় করছেন, তা নিয়ে কথা বলার সময় তিনি নতুন করে ভারতের ইতিহাস রচনার উদ্যোগ প্রসঙ্গে একাধিক মন্তব্য করেন। মোগলদের নামে রাখা দেশের বিভিন্ন শহর, নগর, জনপদ, রাস্তার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি তার কাছে বিনোদনের খোরাক জানিয়ে বলেন, ‘ভারতের ইতিহাসে মোগল ও ব্রিটিশদের গৌরবান্বিত করা হয়েছে, এটা ঠিক। এর একটা কারণ, এ ইতিহাস প্রধানত ইংরেজদের লেখা। স্কুলের ইতিহাস বলতে আমরা প্রধানত মোগল ও ব্রিটিশদের কাহিনিই পড়ে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লর্ড হার্ডিঞ্জ, লর্ড কর্নওয়ালিসদের কথা জেনেছি। মোগল সম্রাটদের কথা পড়েছি। কিন্তু সেভাবে গুপ্ত, মৌর্য, বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কাহিনি পড়িনি। অজন্তা গুহাচিত্র বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকেও জানিনি। এটা অন্যায়।’
ইতিহাস নতুনভাবে দেশীয় দৃষ্টিতে লেখার অবশ্যই প্রয়োজন আছে জানিয়ে প্রবীণ এ অভিনেতা বলেন, কিন্তু তাই বলে এটা মনে করারও কোনো কারণ নেই, মোগলরা এ দেশে এসেছিল স্রেফ লুট করতে।
নাসিরউদ্দিন শাহ আরও বলেন, মোগলরা লুটেরা নয়। তারা এ দেশকে নিজেদের বলে ভেবেছিল। এ দেশে তাদের অবদানও তাই প্রচুর।
তিনি বলেন, ‘এটা ভেবে আমার খুব অবাক লাগে, হাস্যকরও লাগে, যখন দেখি লোকে আকবর ও জঘন্য খুনি নাদির শাহর তফাৎ বোঝে না! অথবা আকবরের সঙ্গে বাবরের প্রপিতামহ তৈমুরের পার্থক্য জানে না!’
নাসিরউদ্দিন বলেন, স্মরণাতীতকাল ধরে ইতিহাস বইয়ে মোগলদের মহিমান্বিত করা হয়েছে। সেই ইতিহাস নতুন করে রচনা অবশ্যই দরকার। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, ইতিহাস থেকে মোগলদের নাম সম্পূর্ণভাবে ধুয়েমুছে সাফ করে দিতে হবে। আজ জনতা কোনো কিছু শুনতে চায় না। প্রশ্ন করতে চায় না। তারা শুধু অন্ধভাবে অনুসরণ করতে চায়। অতীতের দুর্দশা, বিদ্বেষকে দোষারোপ করতে চায়। ভালোর সঙ্গে মন্দের তফাৎ বোঝে না। বুঝতে চায় না।