নয়াবার্তা প্রতিবেদক : দেশে বৈধ পথে গড় হিসাবে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন ১ হাজার কোটি টাকার প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এসেছে। ২৪ দিনে এসেছে ১৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রতি ডলার সমান ১০৭ টাকা ধরে ২৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকারও কিছু বেশি।
আজ রোববার ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রবাসী আয় সম্পর্কিত এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কম কর্মদিবসের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছে ৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এসেছিল প্রায় ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। সে হিসাবে জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২২ কোটি ১৫ লাখ ডলাার। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১০৭ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। আর দেশে ব্যবসা করা বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫২ লাখ ডলার।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডলার এসেছে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডরার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে সর্বোচ্চ ২৪ কোটি ৫ লাখ ডলার। একক ব্যাংক হিসাবেও এটা সর্বোচ্চ।
বিদেশি হাবিব ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও ন্যশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে যথারীতি কোনো বৈদেশিক মুদ্রা আসেনি।
প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বৈদেশিক রিজার্ভের বড় মাধ্যম। যা তুলনামূলক কম ডলার ব্যয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি ৭ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ দশমিক ৫০৪ বিলিয়র ডলার। চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত রপ্তানি আয় ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সেপ্টেম্বর মাসে কিছুটা নিম্নমুখী হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে হুন্ডি ও অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা; রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা; রেমিট্যান্স পাঠাতে ফি প্রত্যাহার এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানোর মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে এর সুফল পাওয়া শুরু হয়েছে। বাড়ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো ঠেকাতে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার (বিএফআইইউ) বিভিন্ন উদ্যোগের কাজ দিচ্ছে। তারা (বিএফআইইউ) এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৫ হাজার ৭৬৬ জন এজেন্ট চিহ্নিত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে পাঠায়। এর মধ্যে হুন্ডির সঙ্গে জড়িত ২ হাজার ২৬৬ জনের এজেন্ট এবং তিনজনের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ বাতিল করা হয়। বিএফআইইউ যে ৫ হাজার ৫৫৭ সুবিধাভোগীর এমএফএস হিসাব অবরুদ্ধ করেছিল, সেখানে জমার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৫৩টি হিসাব সচল করা হয়েছে। বাকি ২ হাজার ৬১৪টি হিসাবে শুধু উত্তোলন বন্ধ আছে। এর মধ্যে ৮০০ জনের বেশি হিসাবধারী তাদের হিসাব সচল করার লিখিত আবেদন করেছেন। বিএফআইইউর কাছে যা বর্তমানে বিবেচনাধীন রয়েছে। পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা সে তথ্য খতিয়ে দেখছে তারা।
এ বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান মনে করছেন, সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো ঠিক জায়গা। আরও আগে এসব উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করা হয়েছে। এটা একদরের দিকে যাচ্ছে। ফলে যারা ডলার কিনে মজুদ করতো তারা আর তা করবে না। এই ভেবে মজুদ করবে না যে, ‘কিনলেই কম দামে বিক্রি করতে হবে’।
তিনি বলন, সুদ হার নমনীয় করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিনিময় হারের ওপরে আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি আরও বলেন, যারা রেমিট্যান্স পাঠান, তাদের আরও বেশি হারে পাঠানোর জন্য মোবাইল ফাইনান্সিং সার্ভিসের মতো মাধ্যম চালু হয়েছে; এগুলো আরও সহজতর করতে হবে। প্রবাসীদের মধ্যে যাদের আয় রোজাগার বেশি, তারা যেন ট্রেজারি বন্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ড-বিল ডিজিটাল মাধ্যমে আরও তাড়াতাড়ি কিনতে পারেন এটাও নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে দেশে আরও অনেক ডলার আসবে এবং রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে যে সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।