নয়াবার্তা প্রতিবেদক : রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে অডিট কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চিকিৎসক মনোয়ারুল হকের (৫৯) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্যের কুল পাচ্ছে না পরিবার ও স্বজনেরা। তাঁরা বলছেন, দীর্ঘ ৩২ বছর সুনামের সঙ্গে চাকরি করছেন চিকিৎসক মনোয়ারুল। তবে কর্মজীবনের শেষ পর্যায়ে এসে মীমাংসিত বিষয় নিয়ে নতুন করে অভিযোগ আপত্তি তোলা উদ্দেশ্য মূলক।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে মরদেহ বুঝে নিতে এসেছেন নিহতের বড় ভাই অবসর প্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মাহফুজুল হক ও ছোট ভাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মনিরুল হক ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
মনিরুল হক বলেন, ‘মৃত্যুর মাত্র ২৫ মিনিট আগেও তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তার পেনশন বন্ধ থাকায় মেজ মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা বকেয়া পড়েছিল। আমি তাঁকে ব্যাংকে এক লাখ টাকা পাঠাই। টাকা পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই আবার মৃত্যু সংবাদ পাই। কিভাবে কি হলো কিছুই মিলাতে পারছি না।’
মনিরুল হক আরও বলেন, ‘২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল মনোয়ারুলের। কিন্তু অডিট আপত্তির কারণে তিনি প্রত্যয়নপত্র বা ছাড়পত্র পাচ্ছিলেন না। ফলে তাঁর এলপিআর–এ যাওয়া ও বেতন দুটিই স্থগিত ছিল। সব মিলিয়ে আমার ভাই একটু চাপে ছিলেন। যদিও অবসরে যাওয়ার ছয় মাস আগে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বিভাগীয় পর্যায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে।’
মৃত্যুর একদিন আগে মনোয়ারুল হক বেতন ভাতা পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়েছে উল্লেখ করে মনিরুল বলেন, ‘গত ২ তারিখ আমার ভাই মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে তাঁর সমস্যা ও অভিযোগের বিষয়ে সচিবকে বিস্তারিত জানান। তখন সচিবের কার্যালয়ে থাকা দুটি ফাইল পাওয়া যায়। একটিতে বিভাগীয় পর্যায়ে অভিযোগের নিষ্পত্তির ও অপরটিতে নতুন করে অডিট বিভাগের আপত্তি। অভিযোগের নিষ্পত্তি করে সচিবালয়ের নির্দেশনার পরেও বেতন–ভাতা চালু না করে আপত্তি তোলায় অডিট বিভাগের নিরীক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কালামের বিরুদ্ধে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব চেয়ে একটি শো কজের চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অডিট কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। সহকর্মীদের নামাজের কথা বলে বের হন তিনি। এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর অপর এক অডিট কর্মকর্তার রুমে তাঁকে পাওয়া যায়।
তাঁর রুমে চিকিৎসকের আত্মহত্যার বিষয়ে আবুল কালাম বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসক মনোয়ারুল আমার রুমে এসেছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলা শেষে আমি নামাজে চলে যাই। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে আমার অফিস সহকারী রুম খুলে তাঁর মরদেহ ঝুলতে দেখে আমাকে ডাক দেন। পরে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পরে তাঁরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ নামায়। কীভাবে তিনি রুমে গেলেন বা কি হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’
নিহত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে আবুল কালাম বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ছিল। গত ছয় মাস আগে এক কোটি ১০ লাখ টাকা অনিয়মের একটি অভিযোগ করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নরসিংদী জেলার উপপরিচালক অরবিন্দ দত্ত। তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত করি। তদন্তে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার অভিযোগসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পাই। যা লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়।’
মীমাংসিত বিষয়ে ফের আপত্তি তোলায় আবুল কালামের বিরুদ্ধে শো কজ নোটিশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
পরিবারসূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার মৃত ওবায়দুল হকের দ্বিতীয় সন্তান মনোয়ারুল হক রাজধানীর সূত্রাপুর থানার নারিন্দা এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তিনি যে বাসাটিতে থাকেন সেটি তাঁর স্ত্রী বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অপর এক মেয়ে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়েন। আর একমাত্র ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ দিকে আজ দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম। তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত চিকিৎসকের মরদেহ তাঁর ভাই বুঝে নিয়েছেন। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। চিকিৎসক মনোয়ারুল হককে নারিন্দা এলাকায় নামাজে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে।