স্বামী-শাশুড়িকে ফাঁসাতে জীবন গেলো মিমের

পটুয়াখালী প্রতিনিধি : স্বামী ও শাশুড়িকে মামলায় জড়ানোর জন্য হালিমা আক্তার মিমের পরিকল্পনায় ভাড়া বাসায় আগুন দেয় মিমের চাচাতো বোনের স্বামী‌ আরিফ হোসেন সিকদার। আর সেই আগুনে নিজেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিম।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) সকালে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

এর আগে রোববার (১২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে আরিফ হোসেন সিকদারকে (৩০) আটক করে পুলিশ। সোমবার আরিফ হোসেন সিকদার পটুয়াখালী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি দুমকী উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের কার্তিকপাশা গ্রামের হামেদ সিকদারের ছেলে।

পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে নিজের শাশুড়ি ও স্বামীকে উচিত শিক্ষা দিতেই চাচতো বোনের স্বামীকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন হালিমা আক্তার মিম। সে অনুযায়ী আগে থেকেই চাচাতো দুলাভাই আরিফ হোসেন সিকদারের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। ঘটনার দিন সকালে আরিফ ঢাকা থেকে দুমকী আসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের মধ্যে কেরোসিন দিয়ে মিমের পরিকল্পনা অনুয়ায়ী তার হাত পা-বেঁধে দেওয়া হয়। মিম ঘরের এক কোণে মশারিতে আগুন দিয়ে আরিফকে ঘরের বাহির থেকে দরজার সিটকানি দিয়ে বন্ধ করে চলে যেতে বলেন।

মিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু এগিয়ে যাচ্ছিল। পরিকল্পনা ছিল আগুন গায়ে লাগার আগেই মিম ডাক-চিৎকার দেবে এবং আশপাশের মানুষ তাকে উদ্ধার করবে। তবে আশপাশের মানুষ আসতে দেরী করায় আগুনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মিম অনেক বেশি দগ্ধ হন। অপরদিকে মিমের শিশু সন্তানটি যাতে নিরাপদ থাকে সে কারণে ঘরের সামনের খাটে ছয় মাসের সন্তানকে রাখা হয়। এদিকে মিমকে যখন প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে সে সময়ও মিম তার পরিকল্পানা অনুযায়ী বলছিল একজন বোরকা পরা মহিলা এবং একজন পুরুষ তার শরীরে কেরোসিন দিয়ে আগুন দিয়েছে।

মিমের পরিকল্পনা ছিল তার শাশুড়ি এবং স্বামী তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চাচ্ছে- এমন একটি বিষয় প্রমাণ করবেন। সে কারণে ঘটনার পর তার শাশুড়ি একমাত্র শত্রু বলেও বক্তব্য দেন। ওই ঘটনার পর পরই মিমের শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

প্রসঙ্গত, পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার সাতানী গ্রামের বাসিন্দা প্রিন্স ও হালিমা আক্তর মিম দম্পতি
উপজেলা সদরের শাহজাহান দারোগার বাসায় ভাড়া থাকতেন। গত ৮ জুন দুপুরে মুখোশধারী দুই দূর্বৃত্ত হঠাৎ ঘরে ঢুকে তার হাত-পা বেঁধে শরীরে আগুন ধরিয়ে ঘরের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায় বলে দাবি করেছিলেন মিম। এ সময় তার চিৎকার শুনে আশপাশের বাসিন্দারা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। মিমকে প্রথমে বরিশাল এবং পরে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়।

Share