পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরালেন চেয়ারম্যান

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার তিয়রবিলা গ্রামে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে সালিশ বৈঠকে এক নারী ও যুবকের গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানোর অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ছেলের পরিবারকে এক লাখ টাকা ও মেয়ের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলার খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসির আহম্মেদ লাল। এছাড়া গ্রামের মসজিদে নিয়ে তাদের তওবা পড়ানো হয়।

এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় উপজেলার খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসির আহম্মেদ লাল ও জড়িতদের শাস্তির দাবি করেন অনেকেই। গত শনিবার (২৯ জুলাই) উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের তিয়রবিলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটলে আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

এ ঘটনায় খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসির আহম্মেদ লালসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী যুবক। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তবে চেয়ারম্যানসহ বাকি দুজন এখনো পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার নাথ। ঘটনার পর থেকে লজ্জায় গা ঢাকা দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিয়রবিলা গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে প্রতিবেশী এক যুবকের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে ওই নারী ও যুবকের উপস্থিতিতে গত শনিবার গ্রাম্য সালিশের ব্যবস্থা করেন খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। সেখানে গ্রামের প্রায় ১৫০ জন নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুজনকে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ইউপি চেয়ারম্যান তাফসির আহম্মেদ লাল ছেলে পক্ষের পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং মেয়ে পক্ষের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। জরিমানার টাকা ২০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। সেই সঙ্গে এই টাকা ঈদগাহ মসজিদ ফান্ডে দেওয়ার ঘোষনা দেন। গ্রামের মসজিদে নিয়ে তাদেরকে তওবা পড়াতে নিয়ে যান নিজেই। এরপরই চেয়ারম্যান নিজ হাতে অভিযুক্ত দুজনের গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরান।

এদিকে এ ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী যুবক আলমডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এরপর থেকেই চেয়ারম্যান গা ঢাকা দিয়েছেন।

আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, পরকীয়ার অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রামে ঘুরিয়েছেন। আমাদের প্রাথমিক তদন্তে পরকীয়ার কোনো প্রমাণ পাইনি এবং একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত করতে কেউ দেখেওনি। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী যুবক চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের নামে মামলা করেছেন। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। চেয়ারম্যানসহ বাকি দুজন পলাতক আছেন। খুব শিগগিরই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে।

Share