গাজী আবু বকর : চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বাড়লেও অক্টোবরে কমেছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। চার মাসে দেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবির মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে রপ্তানি আয় এসেছে ৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। মূলত তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমায় চলতি বছরের অক্টোবরে রপ্তানি ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ৩ মাসে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬ শতাংশ। ইপিবির মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের ধস নামার ফলে প্রথম চার মাসের রপ্তানি আয়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তথ্য বলছে, জুলাই-অক্টোবর চার মাসে মোট ১৭ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি এবং কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কম। আগের বছরে একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। আগের মাস সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ কম। জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ১৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবি বলছে, অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার ফলে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৯ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ কমে সাড়ে ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশই তৈরি পোশাক। তথ্য বলছে, অক্টোবর মাসে তৈরি পোশাক কমে আসার ফলে প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের ঝাঁকুনি লেগেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় হয়েছে ১৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আগের বছর একই সময়ে ১৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ কম। সেপ্টেম্বর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ছিল মাত্র দেড় শতাংশ। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য বলছে, অক্টোবর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর এর প্রভাব পড়েছে মোট রপ্তানিতে। তবে গত বছরের অক্টোবরে করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে রপ্তানি বেড়েছিল। সেই তুলনায় এবার রপ্তানি কম।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর চার মাসে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রপ্তানি পণ্যের মধ্যে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি হয়েছে ১৪৫ মিলিয়ন ডলার; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২৯০ মিলিয়ন ডলারের; আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮৫ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার; যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ কম। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩১৯ মিলিয়ন ডলারের। যা আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে ২৪ শতাংশ কম। এক সময়ের প্রধান রপ্তানি পণ্য সোনালি আঁশ খ্যাত পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩১৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলারের; যা আগের বছরে একই সময়ের ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ কম। আর হোম টেক্সটাইল আগের বছরের চেয়ে কমেছে ৪৫ শতাংশ। জুলাই-অক্টোবর চার মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৩ দশমিকত ২৩ মিলিয়ন ডলারের। এছাড়া জুতা রপ্তানি হয়েছে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রডাক্ট রপ্তানি হয়েছে ১৯৫ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, জুলাইয়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। কিন্তু, পরের মাস গুলোতে প্রবৃদ্ধির হার কমে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মাছ, কৃষিপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্যের পাশাপাশি হোম টেক্সটাইল থেকে রপ্তানি আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।