আলোচিত হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় তানভীর জবানবন্দিতে কাকে কাকে দায়ী করেছিলেন?

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : স্বাধীনতার পর ব্যাংক খাতে ঋণ কেলেঙ্কারির তালিকা করলে সেটি বেশ লম্বাই হবে। একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে, যার বেশির ভাগেরই কোনো সুরাহা হয়নি। আত্মসাৎ করা অর্থও উদ্ধার হয়নি। তবে নানা কারণে এই তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। কেলেঙ্কারির সেই ঘটনা ছিল ২০১১ ও ২০১২ সময়ের।

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি, ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা এবং কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী মিলে কীভাবে ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা যায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। আবার একটি ব্যাংকের মাত্র একটি শাখা থেকে সর্বোচ্চ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা হিসেবেও এটা সবচেয়ে বড়। বলা যায়, সবার চোখের সামনে থেকেই কেলেঙ্কারির এ ঘটনা ঘটেছিল।

সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা (আগে ছিল শেরাটন শাখা, সে সময় এর নাম ছিল রূপসী বাংলা শাখা) থেকে জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে একা হল-মার্কই তুলে নেয় ২ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। একটি ব্যাংকের একটি শাখায় একটি কোম্পানির এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা আর কোথাও ঘটেছে বলে ব্যাংকিং খাতের কেউ এখনো বলতে পারেননি।

হল-মার্ককে প্রথম ঋণ দিয়েছিল পরিচালনা পর্ষদই। এই সুযোগ নিয়ে রূপসী বাংলা শাখা নিয়মিতভাবে হল-মার্ক গ্রুপকে জালিয়াতি করতে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ কর্মকর্তা এই জালিয়াতির সুযোগ করে দেন। জালিয়াতির ঘটনা যাতে উদ্‌ঘাটিত না হয়, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তা জালিয়াতির কথা জানতে পেরে তা উদ্‌ঘাটনের ব্যবস্থা নিলে তাঁদের বদলি করা হয় এক দিনের নোটিশে। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীদের পৃষ্ঠপোষকতাও ছিল। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক উপদেষ্টা, একজন প্রতিমন্ত্রীর নামও পাওয়া গিয়েছিল।

রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এ কে এম আজিজুর রহমান এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছেন। তবে তাঁকে সহায়তা করেছিলেন ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবীরসহ ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাই। আজিজুর রহমান আটক অবস্থায় মারা গেছেন।

হল-মার্ক গ্রুপের এমডি ছিলেন তানভীর মাহমুদ আর চেয়ারম্যান ছিলেন তাঁর স্ত্রী জেসমিন ইসলাম। এক যুগ আগের এই ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় করা এক মামলায় গতকাল মঙ্গলবার তানভীর মাহমুদ, জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাসেম। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন যে, অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে, তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত বলে আদালত মনে করেন। তবে সংশ্লিষ্ট আইনে এই অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন, তাই তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া অন্য সাতজন হলেন তানভীরের ভায়রা হল-মার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, সাইফুল হাসান, নকশি নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও আবদুল মতিন।

দণ্ডিত বাকি আট আসামি হলেন সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার, সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সফিজউদ্দিন এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান। এই আটজনের মধ্যে জামাল উদ্দিনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকিদের ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

তানভীর মাহমুদের সেই জবানবন্দি :
হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় মামলা হয়েছিল একাধিক। এর মধ্যে এক মামলায় ২০১২ সালের ১৮ আগস্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তানভীর মাহমুদ। নিজেকে অনেকটা নির্দোষ দাবি করলেও কেলেঙ্কারির নানা বিবরণ দিয়েছিলেন সেই জবানবন্দিতে। সেখানে তিনি বলেছিলেন,

‘আমি ব্রাহ্মণপাড়া স্কুল থেকে ১৯৮৭ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৯ সাল আখাউড়া শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে—পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ায়, ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে কাফরুলের ১৯০/২ তালতলায় হল-মার্ক প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। তারপর ধীরে ধীরে আমার ব্যবসা বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে ৮–৯টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে আমি হল-মার্ক গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করি। বর্তমানে আমার ৬৫টি চলমান প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে গার্মেন্টস ৩৪টি। সব কটি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক আছে। গত ২০০৪–০৫ সালের দিকে গার্মেন্টস থেকে লোকাল ব্যাক টু ব্যাক এলসি পাওয়ার পর আমি সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখায় হল-মার্ক প্যাকেজিংয়ের নামে হিসাব খুলি। বর্তমানে এই শাখায় আমার ৫৭টি হিসাব রয়েছে। বর্তমানে ১৮টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এই লায়াবিলিটি (দায়বদ্ধতা) রয়েছে। ২০১০ পর্যন্ত আমার ব্যবসা ভালো (ফেয়ার) ছিল।

সাইফুল ইসলাম রাজা আগে আমার জিএম ছিল। পরে প্যারাগন গ্রুপের মালিক হয়। আবদুল মালেক আমার ব্যবসার পরিচালক ছিল। কিছুদিন আগে সে নকশি নিট কম্পোজিট নামে গোপনে ব্যবসা শুরু করে। তসলিম হাসান টি অ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপের পরিচালক। আমার পক্ষে সব ব্যাংক হিসাব দেখত রাজা ও মালেক। অনেক সময় আমি তাদের কাছে ব্যাংক চেক দিয়ে রাখতাম। তসলিম হোসেন আগে থেকেই ভুয়া এলসির কাজ করত। আমার দুই লোক রাজা ও মালেক এই তসলিমের সঙ্গে মিলে কিছু একটা করতে পারে, আমি বিষয়টি পরে জানি। এর মাঝে তারা আমার কিছু সই জাল করে। এর মধ্যে ২০১২ সালের প্রথম দিকে হিসাবমতে আমার লায়াবিলিটি দাঁড়ায় ২০০০ কোটির ওপরে।

হোটেল শেরাটন শাখার ম্যানেজার আজিজ, এজিএম সাইফুল হাসান ও ব্যাংকের সাবেক অফিসার মতিন, অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান (অবসরপ্রাপ্ত), ক্যাশ অফিসার সাইদুরের এসব কাজে যোগসাজশ ছিল। আমাকে বিভিন্ন দফায় সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের আতিকুর রহমান (এমডি চলতি দায়িত্ব), জিএম কার্যালয়ের জিএম ননী গোপাল, মীর মহিদুর, ডিএমডি সাইফুল ইসলাম, জিএম সিরাজী ফেব্রুয়ারি ২০১২–এর দিকে ডাকলে আমি সব দায় স্বীকার করি। আমি বলি, আমার এগুলো লিমিট করে কিস্তি করার জন্য। আমি আরও বলি, আমি সব টাকা পরিশোধ করে দেব এবং প্রয়োজনীয় মর্টগেজ যা লাগে আমি দেব। ৪–৫ দিন পর তারা বোর্ড থেকে একটা সার্কুলার করে শেরাটন শাখায় পাঠায়। তখন ম্যানেজার আজিজ ৪০টা কোম্পানির নামে আইবিপি (ইনল্যান্ড বিল পারচেজ) স্যাংশন করে প্রতিটি কোম্পানির নামে ৩০ কোটি টাকা করে।

২০১২ সালের সম্ভবত এপ্রিলে তসলিম, মালেক, রাজা, ম্যানেজার আজিজ সাহেব, ডিএনএ স্পোর্টসের মালিক শিখা আমাকে ব্যাংকের বারান্দায় ডেকে নিয়ে বলে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ম্যানেজ করতে তিন কোটি টাকা লাগবে।

২৪ মে (পরে বলে এপ্রিলে) বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট দল এলে আমাকে ডাকে। তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, আমি কীভাবে এত টাকা নিয়েছি। আমি বলি আমি বৈধভাবে নিয়েছি। এটার দায়দায়িত্ব আজিজ সাহেবের। ২৪ মে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে সব ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বলে টাকা সমন্বয় করতে। নতুন এমডি এসে আমাকে ডাকে। সেখানে ডিএমডি ইকবালসহ সাবেক জিএমরা এবং নতুন ম্যানেজার আবুল কাশেম (আজিজ সাহেব বরখাস্ত হওয়ায়) ছিল। তারা আমাকে টাকা সমন্বয় এবং প্রয়োজনীয় জমি মর্টগেজ বা বন্ধক রাখতে বলে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি বিভিন্নভাবে ৪৫২ কোটি টাকা পরিশোধ করি। ৬১ একর জমি বন্ধক দিয়েছি। ব্যাংকের তথ্যমতে আমার মোট দায় ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। ৪৫২ কোটি দেওয়ার পর দায় থাকে ২ হাজার ২০২ কোটি টাকা। মর্টগেজ দেওয়া ৬১ একর জমির বর্তমান বাজারমূল্য ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় ২৪টি চিঠি দিয়ে আমার ব্যবসা চালু করাসহ টাকা পরিশোধের জন্য ২০ বছর কিস্তি চাই। কিন্তু কোনো চিঠির উত্তর পাইনি। তবে দুদকের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ব্যাংক একটি চিঠি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের চিঠি দেয়। যা অবাস্তব বলে আমি উত্তর দিই। গ্রেপ্তার হওয়ার পরও আমি আরও মর্টগেজসহ টাকা পরিশোধের কিস্তি চাই এবং ব্যবসা করার সুযোগ চাই। আমি কোনো টাকা বিদেশে পাচার করিনি। আমি টাকা নিয়ে শুধু ইন্ডাস্ট্রি করেছি। আমি আমার জীবনে চিকিৎসার জন্য শুধু একবার সিঙ্গাপুর গিয়েছি।

যাই হোক, এই জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংক ম্যানেজার আজিজ, এজিএম সাইফুল হাসান, অফিসার মতিন, অবসরপ্রাপ্ত ওয়াহিদুজ্জামান, ক্যাশ অফিসার সাইদুর জড়িত ছিল। আমার পরবর্তী জিএম তুষারের মাধ্যমে তসলিম, রাজা ও মালেক—এই তিনজন ব্যাংকের কাঁচা রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করে এসব কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময় টাকা দিত। এটা তুষারও জানত। শাখার কর্মকর্তাদের এভাবে আনুমানিক তিন কোটি টাকা দেওয়া হয়। সোনালী ব্যাংক জিএম কার্যালয়ে তসলিম, রাজা ও মালেক—তিনজন জিএম মীর মহিদুর ও অফিসার ওয়াহিদুজ্জামানকে (এই লোক বিভিন্ন সময় ব্রাঞ্চ ইনস্পেকশনে আসত) প্রায় সময়ই ২–৫ লাখ টাকা করে মোট ৮০–৯০ লাখ টাকার একটা হিসাব দেয় আমাকে। জিএম কার্যালয়ের নতুন জিএম ননী গোপালকেও নাকি আমার লোকেরা বিভিন্ন সময় টাকা দিত।

ননী গোপাল কাজে যোগদানের ১৫ দিন পর আমাকে অফিসে ডেকে নিয়ে তার চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা সাহায্য চায় এবং তার মেয়ের জন্য একটি ই-৭১ মোবাইল চায়। আমি ১৫ দিনের মধ্যে ওই টাকা ও মোবাইল সাহায্য হিসেবে দিই। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের আইটিএফডি বিভাগের সাবেক এজিএম বর্তমান ডিজিএম সফিজউদ্দিনকে তসলিম, মালেক, রাজা, ডিজিএম আজিজ সপ্তাহে এক লাখ টাকা করে মোট ৭০-৮০ লাখ টাকা দিয়েছে বলে তারা আমাকে হিসাব দেখায়। এ ছাড়া প্রধান কার্যালয়ের ডিএমডি আতিকুর রহমানকে আমি ম্যানেজার আজিজের কথামতো চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা দিই।

২০১২ সালের সম্ভবত এপ্রিলে তসলিম, মালেক, রাজা, ম্যানেজার আজিজ সাহেব, ডিএনএ স্পোর্টসের মালিক শিখা আমাকে ব্যাংকের বারান্দায় ডেকে নিয়ে বলে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ম্যানেজ করতে তিন কোটি টাকা লাগবে। এবং এটা বোর্ড সদস্য একজনকে দিতে হবে। আমি একপর্যায়ে রাগারাগি করলাম। তারা আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। তসলিম সাহেব বলে, “আমি নিজে দেব ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, হল-মার্ক দেবে ১ কোটি এবং বাকি ৮০ লাখ মালেক, রাজা ও শিখা দেবে।” আমি রাগারাগি করে চলে আসি। আজিজ সাহেবসহ এরা সবাই আমাকে ফোন করে টাকার বিষয়ে খুব বিরক্ত করতে থাকে। তসলিম বলে, সে নাকি ইতিমধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছে।

আমাকে চাপ দেওয়ার একপর্যায়ে তুষারকে বলি ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য। এটা এপ্রিল মাসের ঘটনা। তুষার একদিন তসলিম সাহেবের সামনে ব্যাংকের বারান্দায় ৫০ লাখ টাকা দেয়। কদিন পর তসলিম ও এক পরিচালক (ডাইরেক্টর) আমার বাসায় গিয়ে বাকি ৫০ লাখ টাকা চায়। আমি রাগারাগি করে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তসলিম অজ্ঞান হয়ে যায়। আমার জিএম তুষার ও তসলিমের পরিচালক আতিকুর রহমান তখন তসলিমকে অ্যাপেলো হাসপাতালে নিয়ে যায়। তসলিম, মালেক, রাজা ও আজিজ সাহেব আমাকে না জানিয়ে তুষারকে চাপ দিয়ে অথবা (ডাইরেক্ট) সরাসরি ক্যাশ থেকে কাঁচা রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি দিয়ে লাখ লাখ টাকা বিভিন্নজনকে দেওয়ার নাম করে নিয়ে যেতে। পরে তুষারকে চাপ দিয়ে, তার কাছে থাকা আমার সই করা ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়ে যেত। তুষার মূল ঘটনার সময় আমার গ্রুপে ছিল না। ঘটনা ঘটার পর আমি তুষারকে নিয়োগ দিই। তারা তুষারকে চাপ দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে।

তসলিম বিভিন্ন সময় আমাকে ডিজিএফআই আর সাংবাদিকদের ভয় দেখাত। তসলিম প্রায় সময় মালয়েশিয়া যেতে এবং সেখানে গিয়ে তুষারের কাছে টাকা চাইত। আমাকে গার্মেন্টস ব্যবসায় নামায় মালেক আর রাজা। এরা দুজন তসলিম হাসানের সঙ্গে মিলে এই জালিয়াতি ঘটায় এবং আমার লায়াবিলিটি বাড়ায়। তারা আমার কোম্পানির এলসি থেকে ৩০–৪০% কমিশন খেয়ে আমার দেনা বাড়ায়। এরা প্রত্যেকে গোপনে কয়েকটা করে ইন্ডাস্ট্রি করেছে।

আজিজ সাহেব সব জেনেই তাদের আলাদাভাবে লোন দিয়েছে, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে। আনোয়ার স্পিনিং, ম্যাক্স স্পিনিং, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজ, স্টার স্পিনিং মিলস—রাজা ও মালেক সাজিয়েছে। পরে আমি নিজে বাঁচার জন্য, যেহেতু সব আমার অ্যাকাউন্টের দায়, সেহেতু আমি সব স্বীকার করে সব দায় এসব নামের কোম্পানির বিপরীতে সমন্বয় করেছি। এটা ডিজিএম আজিজ সাহেবের কথামতো মালেক, রাজা ও তসলিম সাহেব চালাকি করে করেন। (পরে বলেন) আমি করি নাই, ওরা করেছে।

আমার স্ত্রী নামমাত্র কোম্পানির পরিচালক। সরকারি নিয়মের কারণে লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে দুজন লাগে বিধায় আমার স্ত্রীকে পরিচালক করেছি। সে সম্পূর্ণ নির্দোষ। সে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করে না। এটা আমার জবানবন্দি।’

Share