নয়াবার্তা প্রতিবেদক : দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। কিন্তু আসন্ন অর্থবছরের জন্য শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ১২ শতাংশ পার হয়নি। যদিও টাকার অঙ্কে গতবারের বাজেটের চেয়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তাতে দেখা যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোট ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এবার জাতীয় বাজেট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবে এবার জাতীয় বাজেটের প্রায় ১১ শতাংশ ৮৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিক্ষা খাতে যে বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা গতানুগতিক। একই বৃত্তে ঘুরছে শিক্ষার বাজেট।
মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিদায়ী অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেটের প্রায় ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে তা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিল।
আজ বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষা খাতে বিভিন্ন উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, এবারের বাজেট প্রণয়ন করতে গিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ, সবার জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা, খাদ্য নিরাপত্তা, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ, ব্যবসায় প্রক্রিয়া সহজীকরণ, বেসরকারি উদ্যোগ উৎসাহী করার মাধ্যমে বিনিয়োগ ও শিল্পের প্রসার, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কর্মোপযোগী শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে, এমন জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী, যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। আর কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরের জন্য ছিল ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণায়ের জন্য ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন ‘দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১০৪টি উপজেলায় ২৭ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ১৫০টি উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’ চালুর লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার বাজেট নিয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। প্রস্তাবিত অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষা খাতে যে বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা গতানুগতিক। একই বৃত্তে ঘুরছে শিক্ষার বাজেট। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা-৪ পূরণ অর্থাৎ গুণগত শিক্ষার, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এই বাজেট যথেষ্ট নয়। টাকার অঙ্কে হয়তো বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দাবি থাকলেও সেটি পূরণ হয়নি। আবার উন্নয়ন ব্যয়ের বেশির ভাগই ব্যয় হয় অবকাঠামোতে। আর পরিচালন ব্যয়ের বেশির ভাগ খরচ হয় বেতন-ভাতা বাবদ। সব মিলিয়ে এবারের শিক্ষা খাতের বাজেট প্রত্যাশার প্রতিফলন হয়নি বলে মনে করেন তিনি।