গাজী আবু বকর : স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে ১৯৭২ সালের ৩০ জুন ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়। দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদ এটি সংসদে উপস্থাপন করেন। দেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ছোট। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার ৫৩ বছরের ব্যবধানে সেই বাংলাদেশ এখন এগিয়েছে অনেক দূর। দেশের প্রথম বাজেটের ৫২ বছর পর আজ ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার তিপ্পান্নতম বাজেট দ্বাদশ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৫তম এবং এ অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। যা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের তুলনায় ১ হাজার ১৪ গুণ বড়।
আজ ৬ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তার আগে মন্ত্রিসভায় বাজেট অনুমোদন দেয়া হয় এবং পরে ওই প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন স্বাক্ষর করেন। প্রস্তাবিত এই বাজেট সংসদে পাস হবার পর আগামি ১ জুলাই নতুন অর্থবছর থেকে কার্যকারিতা শুরু হবে। নানা সংকটের মধ্যেও নতুন অর্থমন্ত্রী স্বপ্ন দেখছেন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। এজন্য এবারের অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে লাল-সবুজের সার্বভৌম বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলে মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই দৈনন্দিন অপরিহার্য ব্যয় নির্বাহে একটি বাজেট পেশ করেছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদ। বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। পরের দুটি বাজেটও দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন। ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় বাজেটের আকার ছিল ৯৯৫ কোটি টাকা। ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের তৃতীয় বাজেটের আকার ছিল ১ হাজার ৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের চতুর্থ বাজেটের আকার ছিল ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরের পঞ্চম বাজেটের আকার ছিল ১ হাজার ৯৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরের ষষ্ট বাজেটের আকার ছিল ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরের সপ্তম বাজেটের আকার ছিল ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরের অষ্টম বাজেটের আকার ছিল ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরের নবম বাজেটের আকার ছিল ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। ১৯৮১-৮২ অর্থবছরের দশম বাজেটের আকার ছিল ৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরের এগারোতম বাজেটের আকার ছিল ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের বারোতম বাজেটের আকার ছিল ৫ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরের তেরোতম বাজেটের আকার ছিল ৬ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরের চৌদ্দতম বাজেটের আকার ছিল ৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরের পনেরতম বাজেটের আকার ছিল ৮ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরের ষোলতম বাজেটের আকার ছিল ৮ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরের সতেরতম বাজেটের আকার ছিল ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরের আঠারতম বাজেটের আকার ছিল ১২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। ১৯৯০-৯১ অর্থবছরের উনিশতম বাজেটের আকার ছিল ১২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরের বিশতম বাজেটের আকার ছিল ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরের একুশতম বাজেটের আকার ছিল ১৭ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরের বাইশতম বাজেটের আকার ছিল ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরের তেইশতম বাজেটের আকার ছিল ২০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের চব্বিশতম বাজেটের আকার ছিল ২৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরের পঁচিশতম বাজেটের আকার ছিল ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের ছাব্বিশতম বাজেটের আকার ছিল ২৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরের সাতাশতম বাজেটের আকার ছিল ২৯ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। ১৯৯৯-০০ অর্থবছরের আঠাশতম বাজেটের আকার ছিল ৩৪ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। ২০০০-০১ অর্থবছরের উনত্রিশতম বাজেটের আকার ছিল ৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। ২০০১-০২ অর্থবছরের ত্রিশতম বাজেটের আকার ছিল ৪২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। ২০০২-০৩ অর্থবছরের একুত্রিশতম বাজেটের আকার ছিল ৪৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। ২০০৩-০৪ অর্থবছরের বত্রিশতম বাজেটের আকার ছিল ৫১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। ২০০৪-০৫ অর্থবছরের তেত্রিশতম বাজেটের আকার ছিল ৫৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছরের চৌত্রিশতম বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। ২০০৬-০৭ অর্থবছরের পঁয়ত্রিশতম বাজেটের আকার ছিল ৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের ছত্রিশতম বাজেটের আকার ছিল ৮৭ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের সাঁইত্রিশতম বাজেটের আকার ছিল ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরের আটত্রিশতম বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরের উনচল্লিশতম বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরের চল্লিশতম বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরের একচল্লিশতম বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বিয়াল্লিশতম বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তেতাল্লিশতম বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চুয়াল্লিশতম বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পঁয়তাল্লিশতম বাজেটের আকার ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ছেচল্লিশতম বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সাতচল্লিশতম বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের আটচল্লিশতম বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের উনপঞ্চাশতম বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের পঞ্চাশতম বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একান্নতম বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বায়ান্নতম বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এপর্যন্ত ১৩ জন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বাজেট দিয়েছেন।
এর আগে টানা পাঁচবার বাজেট দেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার আগে টানা ১০ বার বাজেট দিয়ে রেকর্ড করছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরও আগে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া টানা ছয়টি বাজেট দেন। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ১০ বাজেট ছাড়াও এরশাদ সরকারের সময় (১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর) দুটি বাজেট দিয়েছিলেন। এ হিসেবে মুহিতের উপস্থাপনকারী বাজেটের সংখ্যা ১২টি। এছাড়া প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানেরও ১২টি বাজেট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।