অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরতে শ্বেতপত্র হচ্ছে, কমিটির নেতৃত্বে দেবপ্রিয়

নয়াবার্তা প্রতিবেদক :  ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগী আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বাস্তবচিত্র তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি ‘শ্বেতপত্র’ প্রণয়নের ধারণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। এ জন্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এই ধারণাপত্র সম্পর্কে জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন এবং এলডিসি থেকে উত্তরণে করণীয় বিষয়েও পরামর্শ থাকবে।

বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ধারণাপত্র সম্পর্কে জানানো হয়, প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রটি প্রণয়নের জন্য দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি করা যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি কমিটির প্রয়োজনীয়সংখ্যক সদস্য মনোনীত করতে পারেন। কমিটির নাম হবে ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’।

প্রস্তাবিত এই কমিটির রূপরেখা সম্পর্কে জানানো হয়, কমিটির সদস্যরা অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিকল্পনা কমিশন কমপ্লেক্সের উপযুক্ত কোনো ভবনকে কমিটির দপ্তর হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কমিটিকে সচিবকে সহায়তা দিতে পারে। সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থা প্রস্তাবিত কমিটির চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করবে। কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে বলেও ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়, গত প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে নিপতিত। বিগত

সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে। অর্থ বিভাগের সূত্রে পত্রিকান্তরে প্রকাশ যে, পতনকালে শেখ হাসিনা সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল, তা বাংলাদেশের তিনটি বাজেটের মোট বরাদ্দের সমান। অন্যদিকে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা না করে দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের ঋণের প্রতি বিগত সরকার ঝুঁকেছিল।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির তুলনায় কর সংগ্রহকে ১৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গত ছয়-সাত বছরে এ অনুপাত ১১ শতাংশ থেকে উলটো ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার এটি একটি দিক মাত্র। সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অবাধ সুযোগ, বাজার সিন্ডিকেট ইত্যাদির ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, গত জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি, তা ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বলা যেতে পারে, বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছিল।

ধারণাপত্র সম্পর্কিত বিবৃতিতে জানানো হয়, বিগত সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট বাংলাদেশের অর্থনীতির নজিরবিহীন নাজুক পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে সুসংহতকরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে; এর মধ্যে প্রধানত হলো—অর্থনীতি পুনরায় সচল করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার সাধন, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দূরীকরণ, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, কর ও শুল্ক নীতির সংস্কার এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রারম্ভেই সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন। এলক্ষ্যে ‘প্রিপারেশন অব এ হোয়াইট পেপার অন দ্যা স্টেট অব দ্যা ইকোনমি’ শিরোনামে একটি ধারণাপত্র (কনসেপ্ট নোট) নথিতে সংরক্ষিত রয়েছে। ধারণাপত্রে বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্যচিত্র সমৃদ্ধ একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুতের ধারণা দেওয়া হয়েছে। শ্বেতপত্রটি প্রণয়নকালে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও মতবিনিময় করা হবে।

প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে প্রধানত ছয়টি বিষয়ে আলোকপাতের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো—পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা এক্সটারনাল ব্যালেন্স, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান।

Share