গত অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়েছে ১৬২ শতাংশ

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : কয়েকটি মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১৬২ শতাংশ।

গত বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘ত্রৈমাসিক ঋণ বুলেটিন’-এ বলা হয়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ হয়েছে ১১ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে তা ছিল চার হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘এর কারণ সরকার কয়েকটি বড় বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ শুরু করেছে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি ঋণের সুদ দিতে হয়। তবে, মূল পরিমাণ পরিশোধের আগে গ্রেস পিরিয়ড থাকে।’

রাশিয়ার অর্থায়নে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে ঋণ নেওয়া হয়েছে। তাই সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

সব মিলিয়ে গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ মেটাতে সরকারের খরচ ১৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। একই সময়ে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধ সাত শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৯ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

গত মার্চ শেষে সরকারের মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নয় লাখ ৮২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ সাত লাখ ১৪ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই পরিমাণ বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বড় বড় প্রকল্পে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ শুরু হয়েছে।’

‘আগামীতে এই পরিমাণ আরও বাড়বে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু অর্থনীতির ওপর চাপ আছে, তাই সরকারের উচিত উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আবার আলোচনা করে সুদ পরিশোধের সময় পুনঃনির্ধারণ করা।’

মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতির (এমটিএমপিএস) প্রতিবেদনে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, আগামী বছরগুলোয় সুদ পরিশোধের পরিমাণ বাড়তে থাকবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বাজেটের শতাংশ হিসাবে বিদেশি সুদ দেওয়ার অনুপাত ২০২১-২২ অর্থবছরের শূন্য দশমিক নয় শতাংশ থেকে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে দুই দশমিক ছয় শতাংশে উন্নীত হবে। বাজেটে বিদেশি ঋণের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ার দুটি বড় কারণ আছে।

একটি হলো—উন্নত অর্থনীতিতে রেফারেন্স রেট বেশি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রেফারেন্স হার অন্যান্য সুদের হার নির্ধারণ করতে ব্যবহার করা হয়। ফেড ফান্ডস রেট, সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) ও প্রাইম রেট সবচেয়ে সাধারণ রেফারেন্স রেটগুলোর মধ্যে আছে।

অন্য কারণ—২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার ফলে বিদেশ থেকে রেয়াতি ঋণ পাওয়ার সুযোগ ক্রমান্বয়ে কমে যাবে। তাই এখন চাপ বেশি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত সুদের হার ২০২০-২১ অর্থবছরে এক শতাংশ থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে দুই দশমিক ছয় শতাংশে দাঁড়াবে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমায় টাকার হিসাবে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের সুদের পরিমাণ বাড়লেও ব্যাংক বহির্ভূত ঋণের ক্ষেত্রে তা কমেছে।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ব্যাংক থেকে ঋণের সুদ পরিশোধ ২১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা।

একই সময়ে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস, বিশেষ করে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সুদ পরিশোধ হয়েছে ৩৪ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। এটি আগের বছরের তুলনায় ৮০০ কোটি টাকা কম।

সরকার গত অর্থবছরে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছিল। প্রথম নয় মাসে ঋণ পেয়েছে ৮০ হাজার ১০১ কোটি টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে দেশি উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৫৩ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হয়নি। বরং আগের ঋণের ১৫ হাজার কোটি টাকা শোধ করা হয়েছে।

ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে।

গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সরকার ৬২ হাজার ২৩৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণের ৭৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা শোধ করেছে। এ খাতে সরকারের নিট ঋণ কমেছে ১২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।

গত মার্চ শেষে সরকারের মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নয় লাখ ৮২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ সাত লাখ ১৪ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।

Share