আনোয়ারা পারভীন : কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট, ঢাকা (পূর্ব) কমিশনারেট এর সূত্রাপুর বিভাগ দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। এই বিভাগের সহকারি কমিশনার ও চারটি ভ্যাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তা এবং সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তাদের নির্ধারিত হারে ঘুষ দিয়ে প্রায় সহস্রাধীক প্রতিষ্ঠান প্রতিমাসে কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। আলোচিত কর্মকর্তাদের নির্ধারিত হারে ঘুষ প্রদাণ না করলে ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট চালান গ্রহন করা হয়না।
এই বিভাগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘুষ প্রদাণের ক্ষেত্রে রয়েছে তিনটি ধাপ। সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা, রাজস্ব কর্মকর্তা এবং সহকারি কমিশনারের জন্য ঘুষের পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে। ছোট বড় প্রতিষ্ঠান ভেদে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। ভ্যাটদাতাদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রষ্ঠিানের মধ্যে ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন দাখিলকারীদের সাথে কথা বলে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে কোন মতামত ব্যাক্ত করেননি। এই বিভাগের অধিনে গেন্ডারিয়া সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা পল্লবী রানী দাস, সূত্রাপুর সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মজুমদার, মীর হাজির বাগ সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা রতন কুমার মৈত্র ও পোস্তগোলা সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল আলম বর্তমানে দায়িত্বরত আছেন।
ভ্যাটদাতাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদক ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর তারিখে কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট, সূত্রাপুর বিভাগের সহকারি কমিশনার এর নিকট তথ্য অধিকার (তথ্য প্রাপ্তি সঙ্ক্রান্ত) বিধিমালার বিধি-৩ দ্রষ্টব্য মোতাবেক সুনির্দিষ্ট ৬টি প্রশ্নের আলোকে একটি তথ্য প্রাপ্তির আবেদন করেন। আবেদনে প্রশ্ন করা হয়; কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট, ঢাকা (পূর্ব) কমিশনারেট এর সূত্রাপুর বিভাগে চলতি অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য-মাত্রা কত? গত জুলাই-২০২৩ হতে সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং পর্যন্ত আদায়কৃত ভ্যাটের পরিমান কত? প্রতিটি সার্কেলের আদায়কৃত ভ্যাট কার্যক্রমের তথ্য পৃথকভাবে বর্ণনা করুন। আলোচিত সময়ে এই বিভাগে ভ্যাট ফাঁকির কোন ঘটণা ঘটেছে কি? ঘটলে কোন মামলা হয়েছে কি? মামলা হলে কতগুলো মামলা হয়েছে? মামলার বিপরীতে কত টাকার ভ্যাট আদায় হয়েছে। এই বিভাগে পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদার, আমদানীকারক প্রতিষ্ঠন, রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান, এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কত? প্রতিটি সার্কেলের পরিসংখ্যানের তথ্য পৃথকভাবে বর্ণনা করুন। এই বিভাগে কোন কোন সার্কেলে কতটি দোকানে ই-এফডি মেশিন চালু হয়েছে। এইসব দোকান হতে প্রতিমাসে কত টাকার ভ্যাট আদায় হচ্ছে।
এই বিভাগের অধিন অলিম্পিক বেকারি, ক্যামেলিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, কিং স্টোন, নিপা ফ্যান, পপুলার বুট পলিশ, বাবা জর্দা, ভরসা ম্যাচ, মিল্লাত ফার্মা, রতন জর্দা, সুপার সাইন ক্যাবল, ক্রাউন ইলেক্ট্রেনিক, হোটেল সুপার, শাহানুর টিভি, পলক পেইন, মতিন ফ্যান, আল আমিন সিকদার, মম জর্দা, এ কে রিরোলিং, আল মদিনা, কিউট, ইউনাইটেড লেদার, প্রগতি, আদারসা রাবার, খন্দকার বকলেট, এল রহমান, আল হাবিব ইলেকট্রিক, ইউরো ফার্মা, আসমানী প্যাকেজিং, রংধনু ফার্নিচার, ক্লাসটিয়া ফুড, হোসাইন ইলেকট্রিক, লাইফ ফুড, কোয়ালিটি, ঘরনি হোটেল, অগ্রণী রাবার, ডায়না মেলামাইন, সাম্মাম জর্দা, ঊষা ফ্যান, মিস্টার বাকের, কাটাবন, মিলন মেটাল, মহসিন পাইপ, সঙ্গীতা টিভি, আজিজ ক্যাবল, সিটি গ্রুপ, বর্ণিত প্রতিষ্ঠান সমূহ প্রতি মাসে কি পরিমাণ ভ্যাট দেয়। অভিযোগ আছে বর্ণিত প্রতিষ্ঠান সমূহের নিকট থেকে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসোহারা নিয়া কম ভ্যাট আদায় করা হয়। এ অভিযোগের সত্যতা কতটুকু। এই বিভাগে গত জুলাই-২০২৩ হতে সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং পর্যন্ত সময়ে কতগুলো প্রিভেন্টিভ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে? এইসব কার্যক্রম হতে কি পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে।
নয়াবার্তার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাকে এই প্রশ্ন জানতে চাওয়ার পর ইতিমধ্যে এক বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও সূত্রাপুর বিভাগের সহকারি কমিশনার অদ্যাবধি প্রশ্নগুলোর উত্তর দেননি।