খুলনা প্রতিনিধি : প্রমত্তা পদ্মার ওপর দিয়ে সাঁই করে খুলনা থেকে ঢাকা ছুটবে ট্রেন। পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলপথ ধরে খুলনার পথে রেল চলাচল শুরু হবে ২৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার)। সুন্দরবন সংলগ্ন শহর খুলনা থেকে ঢাকায় যাওয়া যাবে মাত্র পৌনে চার ঘণ্টায়। আর খুলনা-ঢাকার দূরত্ব কমবে ২৩১ কিলোমিটার।
রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খুলনা-ঢাকা রুটে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ এবং বেনাপোল-ঢাকা রুটে ‘রূপসী বাংলা’ নতুন রেলপথ দিয়ে চলাচল করবে। এ ট্রেন দুটির সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। বাকি ছয় দিন চলাচল করবে। দিনে দুইবার চলাচল করবে ট্রেন দুটি।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে খুলনা রেলস্টেশনের কর্তব্যরত সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. আল আমিন বলেন, খুলনা থেকেই ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা থেকে ঢাকা দুরত্ব ২৩১ কিলোমিটার কমে গেছে। আগে খুলনা থেকে ঢাকার দুরত্ব ছিল ৪৩০ কিলোমিটার। এখন পদ্মা সেতু হয়ে এ রুটের দুরত্ব হয়েছে ১৯৯ কিলোমিটার। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে (কমলাপুর) আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ঢাকা-খুলনা-ঢাকা এবং বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এর উদ্বোধন করবেন। খুলনা থেকে নতুন এ রুটের বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন।
রেলওয়ের ডিভিশনাল ম্যানেজার শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ বলেন, রেলওয়ে গর্বিত যে খুলনাবাসীকে প্রায় চার ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়ার সুবিধা করে দিতে পেরে। জাহানাবাদ ট্রেনটি খুলনা থেকে কাশিয়ানী ও নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাবে। ঢাকা থেকে আবার একইভাবে রাতে খুলনায় এসে পৌঁছাবে। খুলনা থেকে ঢাকা রুটের অন্য ট্রেনের চেয়ে এতে সময় কম লাগবে। ট্রেনে বিভিন্ন শ্রেণির ৭৬৮টি সিট রয়েছে। এই ট্রেনে ১১টি যাত্রীবাহী কোচ এবং একটি লাগেজ ভ্যান রয়েছে। এই লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে খুলনা এবং আশপাশের জেলার বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বা মালামাল ঢাকায় নিতে পারবে। ব্যাপক পরিমাণে মালামাল বহন করা যাবে।
এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর এবার এই সেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে ট্রেন চালুর মাহেন্দ্র ক্ষণে উচ্ছ্বসিত ট্রেনের যাত্রীরা। সড়ক পথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের উন্নয়ন যাত্রার সঙ্গে এবার যোগ হতে যাচ্ছে নতুন মাত্রা।
স্টেশন থেকে নতুন রুটের টিকিট সংগ্রহকারী ওলি আহমেদ ও সানাউল হক বাচ্চু উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, খুব কম সময়ে খুলনা থেকে ঢাকা যেতে পারব। এটা যেমন আরামদায়ক হবে তেমনি ভাড়াও কম। এখন খুলনা থেকে মানুষ ঢাকায় গিয়ে অফিস শেষে দিনে দিনে আবার খুলনায় ফিরে আসতে পারবে।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা-ঢাকা রুটে টেন দেরিতে হলেও চালু হতে যাচ্ছে। এর ফলে খুলনাবাসীর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। এ নিয়ে খুলনার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।
রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুসারে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায়। ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছানোর নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে আবার ট্রেনটি ছেড়ে যাবে রাত আটটায়। খুলনায় পৌঁছানোর কথা ১১টা ৪০ মিনিটে। অন্যদিকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। ট্রেনটি যশোরের বেনাপোল পৌঁছানোর কথা বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় যশোর থেকে ট্রেনটি ছাড়বে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে। আর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে।