ছোটখাটো অব্যবস্থাপনা ছিল, নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য মনে হয়নি

শিক্ষক নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষণ

ঢাবি প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, ছোটখাটো অব্যবস্থাপনা ছিল কিন্তু বড় ধরনের কোনো অসঙ্গতি ছিল না। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না—এটি আমাদের মনে হয়নি।

আজ মঙ্গলবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন এ পর্যবেক্ষণ জানান।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে সব মিলিয়ে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, অভূতপূর্ব একটি নির্বাচন হয়েছে এই অর্থে যে, দীর্ঘ দিন আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখিনি। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের যেটা মনে হয়েছে যে, আমরা এই যে ছোটখাটো যা দেখেছি অসঙ্গতি বা ব্যবস্থাপনার যে ভুলগুলো, এর বাদে আমরা মনে করিনি যে, বড় কোনো ধরনের অসঙ্গতি ছিল এবং নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না। এটা আমাদের কখনো মনে হয়নি।’

গীতি আরা নাসরিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা বড় কোনো অসঙ্গতি দেখিনি, সেটুকু শুধু বলতে পারি। আমরা যেখানে উপস্থিত ছিলাম, বিশাল অব্যবস্থাপনা দেখেছি কিন্তু বিশাল কোনো অসঙ্গতি হয়েছে, সেটা এখন পর্যন্ত আমরা দেখিনি।’

আগামী বছর আবার নির্বাচনের প্রত্যাশা রেখে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, এখন আমরা আশা করছি যে, আগামী এক বছরের মধ্যে আবার ইলেকশন হবে এবং আমরা যে সমস্ত ভুলত্রুটি এবার করেছি বা অব্যবস্থাপনা হয়েছে, সেটা পরেরবার কী হবে…আচরণবিধি ইত্যাদি ইত্যাদি আরও বেশি পরিষ্কার থাকবে।

নির্বাচন আরও স্বচ্ছ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে নির্বাচনকে ঘিরে ছুটির ক্ষেত্রে নির্দেশনাগুলো যেন আমরা আরও আগে থেকে নিতে পারি। যাতে করে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আরও বাড়ে এবং নির্বাচন সত্যিকার অর্থে স্বচ্ছ হবে। এর মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে আমরা এমন একটি ডাকসু তৈরি করতে পারব, যা শিক্ষার্থীদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি ডাকসুর যা দায়িত্ব, সেটা পালন করতে পারবে।

নির্বাচনে অব্যবস্থাপনার কথা তুলে অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে। প্রচুর তথ্যের গ্যাপ রয়ে গেছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে একটা সিদ্ধান্ত পাইনি। যার কারণে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি হয়েছে। সব প্যানেল, প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট যথেষ্ট পরিমাণ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যারা পাস পেয়েছেন, সেগুলোও সব পক্ষের কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছায়নি।

তিনি বলেন, পোলিং এজেন্টের আবেদনের তুলনায় অনেক কম পাস অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটারদের যেভাবে সহায়তা করার কথা, সেটির ঘাটতি দেখতে পেয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে হয়তোবা বাধাও দেওয়া হয়েছে।

টিক দেওয়া ব্যালটের বিষয়ে অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, দুটি হলের কেন্দ্রে টিক দেওয়া ব্যালট পাওয়া গেছে। আমাদের পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে, ভোটকেন্দ্রগুলোতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা সবাই সমভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। পোলিং অফিসার নিয়োগ প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ ছিল। এই অস্বচ্ছতায় ভোটগ্রহণে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছি।

দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে ধীরগতি ছিল উল্লেখ করে অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, জগন্নাথ হল ও টিএসসির ভোটকেন্দ্রে বারবারে ধীরগতি হয়েছে। টিএসসি কেন্দ্রে একজন সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে বাগ-বিতণ্ডার পরে ভোটগ্রহণ কমে গেছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা এই কেন্দ্রে ভোট কমে যাওয়ার কারণ বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।

আটটি কেন্দ্রে সব নিয়ম সমভাবে মানা হয়নি। কোন নিয়মের কী অর্থ সেটি একেক কেন্দ্রে একেকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদিও নিয়মে বলা হয়েছে, প্রার্থী ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে পারবে কিন্তু অনেক কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভোটাররা স্লিপ, চিরকুট নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে কি না তা নিয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা না থাকায় নানা রকম সমস্যার সুযোগ তৈরি হয়েছিল।

পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দিতে চলে এসেছে; সেটি বোধ হয় কেউ কল্পনা করেননি। যার কারণে বিশাল ক্রাউড (জটলা) নিয়ন্ত্রণ করার বিশাল চাপ তৈরি হয়েছিল। ভোট গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।

এসব বিষয় আমলে নিয়ে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, যেসব অব্যবস্থাপনা ছিল সেগুলো না থাকলে নির্বাচনে আরও আস্থা আনা যেত। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভোট দিতে আসায় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা খানম, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ মাহবুব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মারজিয়া রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Share