যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বহিষ্কার

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : শেখ মনি ও শেখ সেলিমের ভগ্নিপতি সমালোচনার মুখে থাকা ওমর ফারুক চৌধুরীকে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই সিদ্ধান্ত ছাড়াও যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করার কথা জানান।

তিনি বলেন, যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে সদস্য সচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সবাইকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস হবে। তার আগ পর্যন্ত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিই সংগঠনের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে বলে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।

গত মাসের মাঝামাঝিতে ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ক্যাসিনো চালানোর বিষয়টি ধরা পড়ার পর তাতে যুবলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে আসে। এর সঙ্গে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগও উঠে আসে যুবলীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে।
ক্যাসিনোকাণ্ডে এরইমধ্যে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক শুরুতে এই অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেও পরে সুর নরম করেন।

তার বিরুদ্ধেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়, ওমর ফারুকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে।

এসব ঘটনায় বেশ কিছু দিন ধরে প্রকাশ্যে আসছেন না ওমর ফারুক চৌধুরী। তার অনুপস্থিতিতেই সম্প্রতি যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোববারের এই বৈঠকেও তাকে রাখা হয়নি।

ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন ২০০৯ সালে তৎকালীন চেয়াম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগে পদ পেলে।

পরে ২০১২ সালে যুবলীগের ষষ্ঠ কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি। তারপর থেকে টানা সাত বছর এই পদে ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী।

অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরুর পর বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় থাকা যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হলো।

সদ্য পদ হারানো নেতা ওমর ফারুক তামাকের বিকল্প ‘টেন্ডু পাতা’ থেকে শুরু করে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করেছেন। ঋণখেলাপি হয়েছেন। রাজনীতিতেও দীর্ঘ সময় সুবিধা করতে পারেননি। বিড়ি শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন, আওয়ামী লীগ করেও লম্বা সময় ছিলেন পেছনের কাতারে। তবে যুবলীগ তাঁকে নিয়ে গেছে শীর্ষে। যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর শোধ করেছেন পুরোনো ব্যর্থতার দেনা।

ভাগ্যগুণে ওমর ফারুক চৌধুরী এমন সাফল্য পেয়েছেন বলে মনে করেন যুবলীগের অনেক নেতা। তাঁরা জানান, ২০০৩ সালে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন ওমর ফারুক। এর আগের কমিটিতে কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আর ২০১২ সালে হন চেয়ারম্যান। এরপর থেকে যুবলীগে তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের শীর্ষ পদ পাওয়ার পর সম্পদ নিলামে ওঠার পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন এবং ধনাঢ্য জীবন যাপন করছেন। যদিও তাঁর দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই।

ওমর ফারুক ৬৪ বছর বয়সে হয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান হন। অথচ যুবলীগের ইতিহাসে এর আগে ৫০ বছরের বেশি বয়সী কেউ চেয়ারম্যান হননি। ১৯৭২ সালের ​নভেম্বরে শেখ ফজুলল হক মণি যখন যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৩২ বছর।

১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া ওমর ফারুক চৌধুরী সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম জেলা বিড়ি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় আসার সময় ওমর ফারুক শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা নাজিউর রহমান (মঞ্জু) এরশাদের মন্ত্রিসভার সদস্য হলে ওমর ফারুক দল বদল করেন। জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব সংহতির চট্টগ্রাম উত্তর জেলার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ওমর ফারুক চৌধুরী নাজিউর রহমানের ভায়রা ভাই এবং শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভগ্নিপতি।

এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে তিনি সদস্য হন। ১৯৯৭ সালে তিনি উত্তর জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ হন।

Share