নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : প্রভাবশালীদের সঙ্গে চলাফেরা আর ছবি তুলে তা ফেসবুকে শেয়ার করে নিজেকে ধীরে ধীরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতারক থেকে ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্বে পরিণত হন রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মো. সাহেদ। তিনি প্রভাবশালীদের নাকের ডগায় চলাফেরা করতেন বীরদর্পে। মাথায় ৩২ মামলা নিয়েও নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতেন বহুরূপী এই প্রতারক।
রাজধানীর বনানী ডিওএইচএসের ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাসার নিচতলায় স্ত্রী সাদিয়া আরাবি রিম্মি ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন প্রতারক সাহেদ। ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া ৯০ হাজার টাকা।
স্বামীর কর্মকাণ্ড ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সঙ্গে কথা বলেন সাদিয়া। তিনি জানান, সর্বশেষ ৪ দিন আগে তার স্বামী ফোন করে বলেন যে, তিনি একটি জায়গায় রয়েছেন। ভালো আছেন। পরিবারের সদস্যদের সাবধানে থাকতে বলেন তিনি। এরপর আর কথা হয়নি।
পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট সাদিয়া বলেন, অনেক দিন ধরেই তার কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে পরিবারের লোকজন নাখোশ ছিল। এ নিয়ে ২০০৮ সালের দিকে ঝামেলা হয়। এরপর ২ বছর বাপের বাড়ি ছিলেন সাদিয়া। ২০১০ সালে আবার স্বামীর সংসারে ফেরেন।
সাদিয়া আরও বলেন, পরিবারের সবার বিশ্বাস ছিল সাহেদ বদলে গেছে। সর্বশেষ ৩-৪ বছর ধরে বাইরে থেকে দেখে সবাই সেটাই ধারণা করেন। তবে রিজেন্টে চিকিৎসার নামে যা সামনে এলো তাতে স্পষ্ট সে বদলায়নি। শত চেষ্টা করেও তাকে বদলানো গেল না।
স্বামীর এমন অপকর্মের জন্য ‘লজ্জিত ও দুঃখিত’ বলে জানান সাদিয়া। তিনি বলেন, করোনার চিকিৎসার নামে সাহেদ যা করেছে তা পীড়াদায়ক। আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। এসব প্রতারণা তার নেশায় পরিণত হয়ে গেছে।
সাদিয়া আরও বলেন, বাইরের বিষয় সাহেদ বাসায় আলাপ করত না। তার বিশ্বস্ত কর্মচারীদের এ ব্যাপারে ট্রেনিং দেওয়া ছিল। সাহেদের যেসব প্রতিষ্ঠান ছিল তার উদ্বোধনে হয়তো কখনও কখনও গিয়েছি। রিজেন্টে আমার কোনো পদ নেই। তবে সবাই সবসময় মুখে মুখে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিত।
সাদিয়া স্বীকার করেন যে, সুবিধা নেওয়ার জন্যই হয়তো নানা সময় নানা পরিচয় দিত তার স্বামী। মানুষকে দ্রুত প্রভাবিত করতে পারত তার স্বামী। মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ, রিজেন্ট হাসপাতাল, সেন্ট্রাল স্কুলসহ তার স্বামীর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সাদিয়া দাবি করেন, তিনি সাহেদকে পরিবর্তন হতে বলেছিলেন। বলেছিলেন ‘বদলে যাও, যে জায়গায় এসেছ এটা ধরে রাখ।’ শেষ পর্যন্ত তার অপকর্ম আবার সামনে আসায় পরিবারের সবাই অপ্রস্তুত। ভালো পরিবারের ছেলে হলেও বিপথগামী ছিল তার স্বামী।