সেতু হলেই বন্ধ হবে লঞ্চ চলাচল

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গামাটি নদীতে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্মাণাধীন একটি সেতু নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির হওয়া সত্ত্বেও তৃতীয় শ্রেণির নৌপথের উচ্চতায় নির্মাণাধীন এ সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন হলে বন্ধ হয়ে যাবে এ নৌরুটের নৌযান চলাচল। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিএ) আপত্তির মুখে মাঝে দীর্ঘ ৯ মাস কাজ বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি আবার এটির নির্মাণ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুনরায় কাজ শুরু করা হয়েছে বলে সওজ দাবি করলেও বিআইডব্লিউটিএ বলছে, এ রকম সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী কোন নৌপথে কতটুকু উচ্চতার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে তা পূর্বনির্ধারিত। সেক্ষেত্রে এ নদীতে আরও বেশি উচ্চতা নিয়ে সেতু নির্মাণ বাধ্যতামূলক।

বিভাগীয় শহর বরিশাল থেকে বাকেরগঞ্জ হয়ে পটুয়াখালীর দুমকি পর্যন্ত সহজ যাতায়াত নিশ্চিতে ব্যবহৃত হয় বরিশাল-দিনারের পুল-লক্ষ্মীপাশা-দুমকি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এ সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে থাকা বাকেরগঞ্জের রাঙ্গামাটি নদী পাড়ি দিতে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ফেরি সার্ভিস। জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১৪ সালে এখানে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করে সওজ। ২০১৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন, বাজেট বরাদ্দ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ২০১৮ সালের মে মাসে শুরু হয় এ সেতুর নির্মাণ কাজ। ২৮৩ দশমিক ১৮৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতু নির্মাণে উচ্চতা ধরা হয় নদীর সর্বোচ্চ জোয়ার থেকে ৭ দশমিক ৬২ মিটার। বিষয়টি জানার পরপরই ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এ উচ্চতা বিষয়ে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে লিখিত চিঠি দিয়ে আপত্তি জানায় বিআইডব্লিউটিএ। এ চিঠি পাওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় সেতুর নির্মাণ কাজ। বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা সরকার মিঠু বলেন, শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী এ নৌপথটি দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। তাছাড়া এ নৌপথ দিয়ে যেসব যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করে সেগুলোর উচ্চতা ৭ দশমিক ৬২ মিটারের চেয়ে বেশি।

বিআইডব্লিউটিএ’র আপত্তির মুখে সেতু নির্মাণ বন্ধ থাকে প্রায় ৯ মাস। এরপর গত জানুয়ারি মাসে আবার শুরু হয় এর নির্মাণ। সওজ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ’র আপত্তির মুখে টানা ৯ মাস কাজ বন্ধ থাকার পর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক। সেখানে বিআইডব্লিউটিএ’র আপত্তি অগ্রহণযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয় পুনরায় সেতু নির্মাণ শুরুর। এরপর থেকেই আবার কাজ শুরু করি আমরা। তাছাড়া ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে এই সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন করার ডেটলাইন রয়েছে।’ বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক মো. মামুন অর রশিদ বলেন, দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরু হওয়ার পর আবারও আপত্তি দিয়েছি আমরা। এ সেতুটি নির্মাণ হলে জনগুরুত্বপূর্ণ নৌপথটি বন্ধ হয়ে যাবে। চরম দুর্ভোগে পড়বে হাজার হাজার মানুষ।

লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, যে জায়গাটিতে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে সেই রুট দিয়ে গোমা-পাতাবুনিয়াসহ বিভিন্ন রুটের অন্তত ৫টি ডবল ডেকার যাত্রীবাহী লঞ্চ রাজধানী ঢাকায় যাত্রী আনা-নেয়া করে। এর সঙ্গে রয়েছে বৃহদাকারের পণ্যবাহী নৌযানসহ অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ। যে উচ্চতায় সেতুটি নির্মিত হচ্ছে তাতে ডবল ডেকার লঞ্চ তো দূরের কথা, পণ্যবাহী নৌযান চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে।

সওজ বরিশাল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তই কেবল নয়, সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স নিয়েছি আমরা।

বিআইডব্লিউটিএ’র নৌপথ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের দক্ষিণ ব-দ্বীপ শাখার যুগ্ম পরিচালক এসএম আসগর আলী বলেন, ‘দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির নৌপথে ঠিক কতটা উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করতে হবে তা পূর্বনির্ধারিত। এক্ষেত্রে তারা (সওজ) কোথা থেকে নেভিগেন ক্লিয়ারেন্স নিয়েছেন সেটা আমার জানা নেই।

Share