আইএমএফের বেধে দেওয়া রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ ব্যর্থ, ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ে অনিশ্চয়তা

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : ঈদকে সামনে রেখে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভ সামান্য বেড়েছে। তারপরেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ে রিজার্ভের বেধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যর্থ হতে চলেছে। আগামী ৩০ জুন শেষ হওয়া চলতি অর্থবছরের জন্য সংশোধিত রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ২৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। ফলে আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

গত ১৩ জুন বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে বিপিএম-৬ হিসাবানুযায়ী দায়হীন তাৎক্ষনিক ব্যবহারযোগ্য নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গ্রস রিজার্ভ বেড়েছে ২৮ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে দেশে বিপিএম-৬ হিসাবানুযায়ী দায়হীন তাৎক্ষনিক ব্যবহারযোগ্য নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে, ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার বা ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ৬ জুন ছিলো, ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার বা ১৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গ্রস রিজার্ভ রয়েছে ২ হাজার ৪৫২ কোটি ১৬ লাখ বা ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ৬ জুন ছিলো, ২ হাজার ৪২৩ কোটি ৪৮ লাখ ৮০১ হাজার বা ২৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গত ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠেছিলো। ৮ এপ্রিল বিপিএম-৬ হিসাবানুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ২ হাজার ১০ কোটি ৫৮ লাখ ৩০ হাজার বা ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। আর গ্রস রিজার্ভ বেড়ে হয়েছিলো ২ হাজার ৫৩৮ কোটি ৫২ লাখ বা ২৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের দায় মেটানোর পর মে মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংকে মোট রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলারে নেমে আসে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ নামে ১ হাজার ৮৩২ কোটি ডলার। কিন্তু ওই সময় প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে।
আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে।

বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রিজার্ভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারণ করতে হয়। সেখানে বাংলাদেশে প্রতি মাসে দেশের আমদানি দায় মেটাতে প্রয়োজন প্রায় ৫০০ কোটি ডলার। ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব করলে বাংলাদেশের রিজার্ভ ইতোমধ্যে বিপদজনক সীমার মধ্যে পড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর ১২ জুন গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো, ২ হাজার ৯৮৭ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার বা ২৯ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৩০ জুন গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায়, ৩ হাজার ১২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর গত ৩০ মে , গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়ায়, ২ হাজার ৪১৬ কোটি ১৪ লাখ মার্কিন ডলার বা ২৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। তবে এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। প্রতি মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে কষ্টসাধ্য হবে বাংলাদেশের জন্য। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হল বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। তবে রপ্তানি প্রবাহও বেড়েছে। এসব কারণেই মূলত রিজার্ভ কিছুটা কমেছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ঝোড়ো বাতাস বইছিল। যে হারে রিজার্ভ কমছিল, সে হারে বাড়ছিল না। ফলে ক্রমাগত কমছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত দুই মাস ধরে সে অবস্থার কিছুটা উন্নতি শুরু হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার সঙ্গে সঙ্গে আবার তা পূরণ হয়ে যাচ্ছে।

Share