আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ও আসিফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে শপথ নিয়েছেন। ৩৬ দিনের যে আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তার অগ্রভাবে দেখা গেছে এই দুজনকে। দাবি আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা থেকে শুরু করে বিক্ষোভের ময়দানে দিনের পর দিন সোচ্চার নেতৃত্বে ছিলেন তারা।

সাংবিধানিক সংকটের মধ্যে দেশ পরিচালনার হাল ধরতে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছে অন্তর্বতীকালীন সরকার।

এই সরকারেরর উপদেষ্টা হয়েছেন ২৬ বছর বয়সি নাহিদ ইসলাম ও ২৫ বছর বয়সি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এত অল্প বয়সে এই ধরনের গুরু দায়িত্বে এর আগে কাউকে বসতে দেখা যায়নি, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেও এমন ঘটনা বিরল।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়স হলেই কেবল কোনো ব্যক্তি তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। আর ২৫ বছর বয়স হলে কেউ সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন পারেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য কোনো নাগরিকের বয়স হতে হয় ৩৫ বছর।

ন্যূনতম বয়স নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনার গুরু দায়িত্বে বসলেন নাহিদ ও আসিফ। তারা বিপ্লবী তরুণদের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্র মেরামতে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই আত্মপ্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যা সফল করতে ৮ জুলাই এসে একটি সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

৬৫ সদস্যের এই কমিটির মধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহসমন্বয়ক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

২৩ সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ ও আসিফকে আন্দোলনের অগ্রভাবে দেখা যায়। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা সরকারি বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

নাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তার শিক্ষাবর্ষ ছিল ২০১৬-২০১৭। তিনি সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। বাবা মায়ের সঙ্গে ঢাকায় বড় হয়েছেন এই তরুণ নেতা।

নাহিদের ডাক নাম ফাহিম। তার বাড়ি ঢাকার খিলগাঁও দক্ষিণ বনশ্রীতে। দক্ষিণ বনশ্রী মডেল স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তার বাবা বদরুল ইসলাম জামির একজন শিক্ষক। মায়ের নাম মমতাজ নাহার। দুই ভাইয়ের মধ্যে নাহিদ বড়।

আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কলেজটির বিএনসিসি ক্লাবের প্লাটুন সার্জেন্ট ছিলেন।

আসিফের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মো. বিল্লাল হোসেন ও মায়ের নাম রোকসানা বেগম।

ছাত্রশক্তি থেকে জাতীয় নেতা

নাহিদ হলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব। আর আসিফ এই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির আহ্বায়ক।

গত বছর ৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে নতুন একটি ছাত্র সংগঠন। তাদের দাবি, এটি রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিমুক্ত স্বতন্ত্র একটি ছাত্র সংগঠন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন থেকে ২০১৮ সালে গঠিত হয়েছিল সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পরে ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে এই সংগঠনের প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুল হক নুর। তার আরেক সঙ্গী আখতার হোসেন হয়েছিলেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ করা হয়।

ছাত্র অধিকার পরিষদের শক্তি ব্যবহার করে নুরুল হক নূর গণঅধিকার পরিষদ নামে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। ছাত্র অধিকারের কেন্দ্রীয় নেতারা নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদে গিয়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করছে বলে অভিযোগ এনে ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা।

৪ অক্টোবর তারা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করান। প্রাথমিকভাবে ২১ সদস্যের কমিটিতে আখতার হোসেন আহ্বায়ক এবং নাহিদ সদস্য সচিব হন। এক বছরের জন্য গঠিত এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৪ অক্টোবর।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আসিফকে আহ্বায়ক করে ৩৩ সদস্যের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটি দেয় গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি। তিন মাস সময় দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হলেও এখনও নতুন কমিটি দিতে পারেনি তারা।

Share