নয়াবার্তা প্রতিবেদক : আপেল আমদানির ঘোষণা দিয়ে কার্টুনে আপেলের আড়ালে সিগারেট আমদানির চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধরা পড়েছে।কাস্টমস বলছে, এসব সিগারেটের মূল্য এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর সিগারেটের বিপরিতে শুল্ক আসে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ টাকার। অর্থ্যাৎ কার্টনে ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার সিগারেট পাওয়া গেছে।ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম কাস্টমসে।
কাস্টমস সূত্র বলছে, সাধারনত আপেল আমদানি হয় হিমায়িত কন্টেইনারে। যেখানে তাপমাত্রা থাকে ৫ ডিগ্রির নিচে। কিন্তু সেই হিমায়িত কন্টেইনারে বিশেষভাবে লুকিয়ে আনা হয়েছে বিদেশি সিগারেট। যার তাপমাত্রা সাধারণত ১৫-১৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকে। অথচ সেই হিমায়িত কন্টেইনারের ভেতর কার্টনের নিচে আনা হয়েছে আপেল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিই এই ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু কার্টন খুলে প্রমাণ পেয়ে তারাও হতবাক। কন্টেইনারে কার্টন ছিল ১১২০টি, যেগুলোতে ঘোষণা অনুযায়ী সব আপেল থাকার কথা ছিল কিন্তু ৩৬৬ কার্টনে আপেল পাওয়া গেছে। আর বাকি ৭৫৪ কার্টনে ওপরে ছিল আপেল আর নিচে সাজানো ছিল তিনটি বিদেশি ব্রান্ডের সিগারেট।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ কমিশনার সালাউদ্দিন রিজভি বলেন, কার্টনের নিচে জিপি শিট দিয়ে একটি স্তর সাজানো হয়েছে যেখানে ছিল পলিথিনে মোড়ানো সব সিগারেট। বিষয়টি দেখে সত্যিই আমরাও অবাক ছিলাম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কার্টনে কিভাবে সিগারেট আনা যায়। আমাদের ধারনারও বাইরে ছিল কিন্তু এক দুই কার্টন খোলার পর নিশ্চিত হই। ফলে একে একে আমাদের এক হাজার ১২০ কার্টনই খুলে চেক করতে হয়েছে। যা ভোর পর্যন্ত লেগেছে। অবশ্যই এটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। কারণ জিপি শিট দিয়ে বিশেষভাবে লুকানোই তার প্রমাণ।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের রেলওয়ে মেন্স স্টোর বা ফলমন্ডির আমদানিকারক মারহাবা ফ্রেশ ফ্রুটস আরব আমিরাত থেকে এক কন্টেইনার আপেল আমদানির ঘোষণা দেয়। এজন্য চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জের ডাচ-বাংলা ব্যাংক শাখা থেকে ৬ ডিসেম্বর ঋণপত্র খোলে আমদানিকারক। চালানটি আসার পর আমদানিকারকের নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মাদারবাড়ির জিমি এন্টারপ্রাইজ গত ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমসে আপেল ঘোষণায় শুল্কায়ন করে।
কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পোর্ট কন্ট্রোল ইউনিট ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চালানটির ছাড় আটকে দেয়। গত ২২ ডিসেম্বর চালানটি কন্টেইনার খুলে কায়িক পরীক্ষায় মন্ড, এসে এবং অরিস ব্রান্ডের ২২ লাখ ১৯ হাজার শলাকা সিগারেট পাওয়া যায়। এর বাইরে ১৫ হাজার কেজি আপেল পাওয়া যায়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, শুল্ক ফাঁকি দিতেই এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন আমদানিকারক। কিন্তু কার্টনের নিচে সিগারেট রেখে ওপরে আপেল সাজিয়ে রেখে কাস্টমসকে বোকা বানিয়ে চালানটি ছাড় নিতে চেয়েছিল আমদানিকারক। তার আগেই ধরা পড়লো। এই চালানে অন্তত ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার সিগারেট আটক হলো।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘কাস্টমসকে বোকা বানিয়ে আপেলের চালানে উচ্চশুল্কের এবং শর্তসাপেক্ষে আমদানিকৃত ২২ লাখ ১৯ হাজার শলাকা সিগারেট এনে ছাড় নিতে চেয়েছিল আমদানিকারক। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। এতে অন্তত ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করেছিল আমদানিকারক চট্টগ্রামের রেলওয়ে স্টেশনের মারহাবা ফ্রেশ ফ্রুটস।’
গত আটদিনে চট্টগ্রাম কাস্টমসের এই ধরনের বিশেষায়িত কৌশলে উচ্চ শুল্কের, আমদানি নিষিদ্ধ এবং অন্তত স্পর্শকাতর আমদানি পণ্য আটক করেছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, কাগজের চালানের আড়ালে সিগারেটের ব্যান্ডরোল আমদানি, যা দেশের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্য হুমকি বলছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।