ইউপি চেয়ারম্যানরাও অপসারিত হচ্ছেন

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : দেশের সকল সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, কমিশনার, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সাবেক ক্ষমতাচ্যুৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে তৃণমূলের সাধারণ নাগরিকদের সেবার কথা বিবেচনা করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের তখন অপসারণ করা হয়নি। কিন্তু সারা দেশে দুই হাজারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় সাধারণ মানুষজনের একটি বড় অংশই সেবাবঞ্চিত হয়ে পড়েছে। আবার বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অনেক সংঘাত ও সামাজিক নৈরাজ্যের পেছনে ইউপি চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে চলেছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদের আগামী বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে সারা দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। সরকার পতনের পর গত ১৯ আগস্ট একটি পরিপত্র জারির মধ্য দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানিয়েছিল, দেশের যেসব ইউপিতে চেয়ারম্যান ধারাবাহিকভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন, জনসেবা অব্যাহত রাখার স্বার্থে বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যানকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দিতে পারবেন। কিন্তু নতুন প্রেক্ষাপটে সরকার আগের ওই অবস্থান থেকে সরে আসছে।

ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকেও ইউপি চেয়ারম্যানদের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই চেয়ারম্যানরা বিগত হাসিনা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট। তাদের পরোক্ষ সহায়তায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত হতে পারে।

উল্লেখ্য, অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদেরই নির্বাচন হয়েছে দুই বছর আগে। ২০১৮ সালের পর স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এ কারণে গত ৬ বছরে হাতে গোনা কয়েকটি ইউনিয়ন ও উপজেলা বাদে বেশিরভাগেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এসবের অনেকগুলোর নির্বাচন নিয়েও রয়েছে অনিয়ম কারচুপির অভিযোগ।

স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের আইন অনুযায়ী, পদত্যাগ করলে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ শূন্য হবে। এ ছাড়া পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কারণে এই পদ শূন্য হলে নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবে। তবে শূন্য হওয়া ছাড়াও আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি বা দণ্ডিত হলে, পরিষদের স্বার্থপরিপন্থি কাজ করলে সরকার চেয়ারম্যানদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।

এ ছাড়া দুর্নীতি, অসদাচরণ বা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধ কিংবা বিনা অনুমতিতে দেশত্যাগের কারণে ইউপি আইন অনুযায়ী তাদের অপসারণ করতে পারে সরকার। যদিও বিভিন্ন সময় প্রায় এক হাজার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়মের অপরাধ প্রমাণিত হলেও ব্যবস্থা নিতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ আবু আলম শহীদ খান বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে এমন সব নির্বাচন হয়েছে, যেসব নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সরকার পরিবর্তনের ফলে মানুষ এখন ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং এসব জনপ্রতিনিধির পদত্যাগ বা অপসারণ চাইছে। বাস্তবতার নিরিখে বর্তমান সরকারের এসব বাস্তবায়ন করা উচিত হবে। অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে যেমনভাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, ঠিক একইভাবে ইউপি পরিষদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

এ প্রসঙ্গে একাধিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ এলাকায় অবস্থান করলেও দপ্তরে বসছেন না। একজন নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সকল ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা খুবই কষ্টের ব্যাপার। এতে দাপ্তরিক কার্যক্রমও দারুণভাবে ব্যাহত হয়। তা ছাড়া জনবলেরও অভাব রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন খোলা থাকলেও অনেক জায়গায়ই নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানরা পরিষদে যাচ্ছে না, এমন অভিযোগ রয়েছে। অনেক জায়গায় ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় পরিষদ ভবনে তালাও ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। আরও কয়েকটি জেলায় ইউপি চেয়ারম্যানদের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল কিংবা পরিষদ ঘেরাও করা হয়েছে।

Share