নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : দেশে করোনা সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি দেশে এক দিনে করোনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা।
এর আগে গত ৫ আগস্টও ২৬৪ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১১ হাজার ১৬৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশে করোনা সংক্রমণের সবশেষ পরিস্থিতি জানানো হয়। আগের দিনের তুলনায় দেশে মৃত্যু বাড়লেও নতুন রোগী শনাক্ত এবং শনাক্তের হার কমেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৭ হাজার ৪২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের দিন ২৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১১ হাজার ৪৬৩ জন। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩২২। মোট মৃত্যু হয়েছে ২৩ হাজার ১৬১ জনের। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬২ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৯০৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৬০ জন, খুলনা বিভাগে ২৭ জন, রাজশাহীতে ২৫, ময়মনসিংহে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা অন্যান্য বিভাগের।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ।
এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও দুই মাসের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে। গত জুলাই মাসে দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে এর আগে কোনো মাসে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ। এর আগে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪ জনের।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার সর্বাত্মক বিধিনিষেধ চালু করা হয়, যা আজ শেষ হচ্ছে।
আগামীকাল থেকে অফিস, ব্যাংক, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট ও গণপরিবহনসহ প্রায় সব কিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এতদিন বাস–ট্রেন–লঞ্চে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করতে দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার আর সেই বিধিনিষেধ থাকছে না।
বর্তমানে সারা বিশ্বেই করোনার ডেলটা ধরনের দাপট চলছে। এরইমধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৩৫টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার অতিসংক্রামক এই ধরন ছড়িয়েছে। এর ফলে বিশ্বজুড়েই করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বর্তমানে বিশ্বের যেসব দেশে এক দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যাচ্ছে, সেই তালিকায় নবম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সোমবার সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুর যে তালিকা করেছে, সেখানে বাংলাদেশের এই অবস্থান হয়েছে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায় ১ হাজার ৪৭৫ জনের। তারপরে মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে ৯৯০ জনের। তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে রাশিয়ায় ৭৬৯ জনের।
এ সময় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ব্রাজিলে ৪৩ হাজার ৩৩ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে ইরানে ৩৯ হাজার ৬১৯ জন। রোগী শনাক্তের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত, ৩৫ হাজার ৪৯৯ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২০ কোটি ২৬ লাখ ৮ হাজার ৩০৬ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৪২ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯১ জনের। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপরে বেশি মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিল ও ভারতে।