এবার হারুনকে রংপুরে বদলি

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুনকে এবার রংপুর ডিআইজি রেঞ্জ কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১সেপ্টেম্বর) স্বরষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাহবুবুর রহমান শেখ স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে রংপুর ডিআইজি রেঞ্জ কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

এর আগে সোমবার তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশে পুলিশ অধিপ্তরের সংযুক্ত রখার কথা বলা হয়। এর আগে এডিসি হারুনকে রমনা জোন থেকে সরিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিঅ্যান্ডএম) বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। একই দিন সন্ধ্যায় আইজিপির এক আদেশে তাকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়।

কে এই হারুন : ৩১ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জোনের এডিসি হওয়ার পরপরই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও নিজ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রদের সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তিনি।

হারুন অর রশীদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের থানাঘাটা মাড়িয়ালায় গ্রামে। তার বাবার নাম জামাল উদ্দীন গাজী ও মায়ের নাম শেফালী খানম। ১৯৮৮ সালের জুনে তার জন্ম। প্রাথমিক শিক্ষা এলাকাতেই। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ২০০৫-০৬ সেশনে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। স্থানীয়দের তথ্যমতে, তার পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেও তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওঠেও সক্রিয় রাজনীতি করেননি। ওয়ান-ইলেভেনের পর সরকার পরিবর্তন হলে তিনি ছাত্রলীগে সক্রিয় হন। হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। পুলিশের এএসপি হয়ে গেলেও তাদের মধ্যে সখ্য ছিল। ওই ছাত্রলীগ নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন। তার তদবিরে হারুনকে ডিএমপির রমনা জোনের এডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয় বলে প্রচার আছে।

রমনা জোনের এডিসি থাকাকালে হারুন সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ঢাবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মারধর, পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবলকে প্রকাশ্যে চড়থাপ্পড় মারাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনেক সময় অতি উৎসাহী হয়ে নিপীড়কের ভূমিকায় ছিলেন হারুন। এর আগে রমনা জোনের দায়িত্ব পালন করা কাউকে নিয়ে এত বিতর্ক তৈরি হয়নি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শাহবাগে একটি সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে সমালোচিত হন হারুন। সমাবেশে অংশ নেওয়া লোকজনকে লাঠিপেটা করার আগে তার গায়ে জ্যাকেট এবং মাথায় হেলমেট পরিয়ে দেন তার সহকর্মীরা। হেলমেট পরানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি প্রচণ্ড মারমুখী হয়ে ওঠেন।

নিউমার্কেট এলাকায় দোকানমালিক, বিক্রেতা ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীদের দিকে রাবারের বুলেট ছুড়তে এক কনস্টেবলকে নির্দেশ দেন হারুন। ওই কনস্টেবল বুলেট শেষ বলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে চড় মারেন। ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

গত বছরের ৪ মার্চ গণঅধিকার পরিষদের ওই সময়ের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির প্রতিবাদ মিছিল ঢাকা ক্লাবের সামনে গেলে হারুনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও সাদা পোশাকের লোক বিক্ষোভকারীদের অতর্কিত লাঠিপেটা করে। একই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এডিসি হারুনের নেতৃত্বে পুলিশ ছাত্রদলের সমাবেশে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে বিচার চেয়ে শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও অন্যান্য বাম সংগঠন আয়োজিত মশাল মিছিলে লাঠিপেটা করা হয় হারুনের নেতৃত্বে। গত বছরের মাঝামাঝিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটার ছবি তুলতে গিয়ে হারুনের অপেশাদার আচরণের শিকার হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।

Share