নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : ভয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে এসআই (উপপরিদর্শক) খায়রুলের নাম প্রকাশ করেননি যশোরে ধর্ষণের শিকার ওই নারী। তিনি আজ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি খায়রুলকে শুধু চিনি-ই নাই, ভালোভাবেই চিনি। কিন্তু ওই দিন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে যখন চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে, তখন এসআই খায়রুল আমার দিকে এমনভাবে তাকাইছে, তাতে আমি ভয় পাইয়ে গেছি।’
আজ শুক্রবার সকালে ওই নারী তাঁর বাসায় সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন।
এর আগে যশোরের শার্শা উপজেলায় ধর্ষণের শিকার ওই নারীর বাড়িতে যান বিএনপির কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিনিধিদলসহ জেলা কমিটির নেতারা । ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তাসহ আইনি সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব আইনজীবী নিপুণ রায় চৌধুরী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস বেগম, শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসান জহির প্রমুখ।
বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশের ভয়ে ওই নারী এসআই (উপপরিদর্শক) খায়রুল আলমের নাম আগে প্রকাশ করতে পারেননি। এখন তিনি গণমাধ্যম ও আমাদের কাছে এসআই খায়রুলের নাম প্রকাশ করেছেন।’ পুলিশের ওই সদস্যসহ অপর তিনজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও চান তিনি। নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশের পোশাক পরিয়ে এসআই খায়রুলকে ওই নারীর সামনে হাজির করা হয়েছিল। পুলিশের ভয়ে সেদিন তিনি খায়রুলের নাম বলতে পারেননি। তিনি খায়রুলকে ভালোভাবেই চেনেন। কারণ একাধিকবার তাঁর বাড়িতে গিয়ে খায়রুল ওই নারীর কাছ থেকে জোর করে ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে এসেছে।’
বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে নিপুণ রায় বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে এসআই খায়রুলকে মামলার প্রধান আসামি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’
২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে ওই গৃহবধূর বাড়িতে যান এসআই খায়রুল, তাঁর তথ্যদাতা (সোর্স) কামারুলসহ চারজন। তাঁরা ওই গৃহবধূর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই খায়রুল ও কামারুল তাঁকে ধর্ষণ করেন। এ সময় অপর দুজন ধর্ষণে তাঁদের সহযোগিতা করেন।
পরে ওই নারী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ভয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে এসআই খায়রুলের নাম প্রকাশ করতে পারেননি তিনি। তিনি এখন এসআই খায়রুলসহ সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমি খায়রুলকে শুধু চিনি-ই নাই, ভালোভাবেই চিনি। আমাদের কাছ থেকে দফায় দফায় আট হাজার ও চার হাজার করে টাকা নিয়েছে। আবার বিনা কারণে আমার স্বামীরে ধরে নিয়ে গেছে।’
ধর্ষণের শিকার নারী বলেন, ‘পুলিশ যখন খায়রুলকে আমার সামনে নিয়ে আসে এবং জিজ্ঞেস করে যে ধর্ষণের সময় ইনি ছিলেন কি না? তখন আমি বিবেচনা করে দেখলাম, সে তো পুলিশের লোক। যখন সে বারবার আমার স্বামীরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে আমি পারব না। তা ছাড়া খায়রুল আমার দিকে এমনভাবে তাকাইছে, তাতে আমি ভয় পাইয়ে গেছি।’
ধর্ষণের সময় এসআই খায়রুল উপস্থিত ছিলেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রিপোর্টে তো প্রমাণ আসবে। আর আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলিও তারা সেসব বলবে। কারণ তারা আরও ভালো জানে।’
এসআই খায়রুলসহ আরও যে তিনজন আসামি রয়েছেন তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ওই গৃহবধূ বলেন, ‘তাদের শাস্তি দেখে আরও ৫/১০ জন মানুষ যেন এমন অপকর্ম করতে সাহস না করে।’
এর আগে পুলিশ দাবি করেছিল, এসআই খায়রুল আলমকে ওই গৃহবধূর সামনে উপস্থিত করা হলে তিনি তাঁকে চিনতে পারেননি। সে জন্য তাঁর নাম বাদ দিয়ে মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, ‘শার্শা থানার ওসি তাঁর সহকর্মীকে বাঁচানোর জন্যে ধর্ষণের মামলার এজাহার থেকে এসআই খায়রুলের নাম বাদ দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমান বলেন, ‘ওই গৃহবধূ সেদিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনেই এসআই খায়রুল সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য দিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছেন, এসআই খায়রুলকে তিনি চিনতে পারছেন না। তাঁকে কোনো প্রকার ভয়ভীতি বা চাপ দেওয়া হয়নি।’ ওসি বলেন, ‘বিএনপির নেতারা ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে টাকাপয়সা দিয়ে এসেছেন। আরও টাকাপয়সা দেওয়ার জন্য ওই নারীকে লোভ দেখানো হয়েছে। বিএনপির নেতারা ওই বাড়িতে যাওয়ার আগে তাঁদের আরও দুজন লোক ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। যে কারণে ওই নারী প্রভাবিত হতে পারেন বলে আমরা ধারণা করছি।’
৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওই গৃহবধূ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ওই দিন রাতেই শার্শা থানায় একটি মামলা করেন গৃহবধূ। মামলায় এসআই খায়রুলের নাম রাখা হয়নি। আসামি করা হয় স্থানীয় কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল, আবদুল লতিফ ও আবদুল কাদেরকে। একজনকে করা হয় অজ্ঞাত আসামি।
এ ঘটনা তদন্তে পুলিশ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জানান, ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর ধর্ষকদের ব্যাপারে জানা যাবে। পরীক্ষার জন্য নমুনা পুলিশের সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।