নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : গত ১৪ দিনে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত বলে সন্দেহে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২১ জন রোগী মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৮ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
২ মে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে করোনা রোগীদের ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। হাসপাতালটির পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৪ দিনে আমাদের হাসপাতালে ১ হাজার ৪০০ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১২১ জন। পরীক্ষার মাধ্যমে ১৮ জন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যদের মধ্যে কেউ কেউ করোনায় সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৩ মে পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়া ১২৫ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে সর্বপ্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য প্রথম সরকারনির্ধারিত চিকিৎসাকেন্দ্র রাজধানী ঢাকার উত্তরার কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল। পরবর্তী সময়ে কুর্মিটোলা, মহানগর জেনারেল হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। দেশের বড় হাসপাতালগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলজে হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। গতকালের হিসাব অনুযায়ী, করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন সর্বমোট ২৮৩ জন। সংক্রমিত সর্বমোট ১৮ হাজার ৮৬৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৬১ জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী মারা যেতেন। হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী ভর্তি হতে শুরু হওয়ার পর বর্তমানে প্রতিদিনের মৃত্যুর হার কিছুটা বেড়েছে। তা ১০ শতাংশ হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে করোনাভাইরাস সন্দেহে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১০ ভাগ রোগী কিন্তু মারা যাচ্ছেন। করোনা রোগী ভর্তির পর সব মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন রোগী মারা যাচ্ছেন।’
করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ভর্তি রোগীদের মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে পরিচালক কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা যখন কোভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহে সব ধরনের রোগী ভর্তি নেওয়া শুরু করলাম, তখন কিন্তু অন্য কোনো হাসপাতাল কোভিড-১৯–এর সন্দেহভাজন রোগী ভর্তি করছিল না। এসব রোগী কিন্তু ঘুরছিলেন। আমরা যখন ভর্তি নেওয়া শুরু করলাম, তখন একসঙ্গে সব রোগী আমাদের এখানে ভর্তি হলেন। অধিকাংশই কিন্তু বয়স্ক মানুষ। কেউ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন, কেউবা কিডনিতে। অর্থাৎ, মুমূর্ষু অবস্থায় এসব করোনা সাসপেক্টেড মানুষ সব আমাদের এখানে এসে যান। যাঁরা বহু রোগে আক্রান্ত, তাঁদের তাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কিন্তু কম। অল্পে কাবু হয়ে যান। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের অধিকাংশের বয়স পঞ্চাশের ওপরে।’
ঢাকা মেডিকেলে করোনার দ্বিতীয় ইউনিট : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পর হাসপাতালটি আগামীকাল শনিবার থেকে করোনার আরেকটি ইউনিট চালু করতে যাচ্ছে। সেখানে কমপক্ষে ৬৫০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। করোনা দ্বিতীয় ইউনিটটি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ নামে পরিচিত।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহে আসা রোগীদের মধ্যে যারা শিশু, যাদের সার্জারি করার দরকার হতে পারে, তাদের হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হবে। অপর দিকে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, যাঁরা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের করোনার ইউনিট-২–এর মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হবে। বার্ন ইউনিট হবে করোনার সার্জারি বিভাগ। করোনার ইউনিট-২ হবে মেডিসিন বিভাগ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সাড়ে ৬০০ বেডের নতুন যে করোনা ইউনিট-২ চালু করতে যাচ্ছি, সেখানে করোনা সন্দেহভাজন এবং করোনায় আক্রান্ত দুই শ্রেণির রোগীকে আমরা ভর্তি করব। যাঁরা সাসপেক্ট থাকবেন, তাঁদের আমরা টেস্ট করব। করোনা পজিটিভ হলে তাঁদের কোভিড পজিটিভ জোনে নিয়ে যাওয়া হবে। আর যিনি সাসপেক্ট হিসেবে থাকবেন, তিনি সাসপেক্ট জোনেই থাকবেন। আর যদি করোনা পজিটিভ না হন, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। নতুন ইউনিটটি চালু হওয়ার পর বার্ন ইউনিটে চাপ অনেক কমে যাবে। কারণ এখানকার অধিকাংশ রোগী কিন্তু মেডিসিনের।’
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া প্রসঙ্গে হাসপাতালটির পরিচালক বলেন, ‘করোনায় সংক্রমিত কিংবা করোনার সন্দেহভাজন রোগী যাঁরা আমাদের এখানে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। করোনায় সংক্রমিত হয়ে যাঁরা আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরা অনেক রোগে আক্রান্ত। এসব রোগীর চিকিৎসায় কারও কিডনি সাপোর্ট দিতে হয়, হার্টের সাপোর্ট দিতে হয়, ব্লাডের সাপোর্ট দিতে হয়। আর যাঁরা বয়স্ক, তাঁদের তো অনেক রোগ। এর সঙ্গে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁরা মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়ছেন। আবার তাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কম।’