নয়াবার্তা প্রতিবেদক : ঘন কুয়াশার কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট ল্যান্ডিং সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বলা চলে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে এ পদ্ধতিতে।
প্রায় প্রতিদিনই একাধিক ফ্লাইট শাহজালালে নামতে না পেরে দেশে ও দেশের বাইরে নিকটস্থ বিমানবন্দরগুলোয় অবতরণ করছে। কুয়াশা কেটে গেলে প্লেনগুলো এ বিমানবন্দরে আসছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে ফ্লাইট পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। নির্ধারিত সময়ের বাইরেও আকাশে উড়তে থাকায় যেমন জ্বালানি ব্যয় বাড়ছে, পাশাপাশি অবতরণ না করতে পারা ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের রাখতে হচ্ছে হোটেলে। এতে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলোকেও।
কেন ল্যান্ডিং করা যাচ্ছে না ঘন কুয়াশায়?
অনেক বেশি ঘন কুয়াশায় বিশ্বের যেকোনো দেশেই ফ্লাইট ল্যান্ডিং বা অবতরণ করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তুলনামূলক কম বিরূপ আবহাওয়ায় ফ্লাইট ল্যান্ড করতে পারে না। দেশে প্রবেশের প্রধান প্রবেশদ্বারটিতে ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) থাকলেও এটি এখনও সনাতনী ক্যাটাগরি-১ দিয়েই চলছে। যে কারণে এয়ারলাইন্সগুলোকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এজন্যই আধুনিকায়নের কথা বলা হচ্ছে। একমাত্র আধুনিক আইএলএস পদ্ধতির সাহায্য ছাড়া কুয়াশা ঢাকা রানওয়েতে কোনো বৈমানিকের পক্ষে উড়োজাহাজ অবতরণ করা সম্ভব নয়।
মূলত তিন ধরনের আইএলএস ক্যাটাগরি হয়। ক্যাটাগরি-১, ক্যাটাগরি-২ ও ক্যাটাগরি-৩। রানওয়েতে ক্যাটাগরি-৩ প্রযুক্তি বসানো হলে উড়োজাহাজ অবতরণের সময় বৈমানিকেরা শতভাগ দৃশ্যমানতা পান। ক্যাটাগরি-২ প্রযুক্তি সম্বলিত রানওয়েতে নূন্যতম দৃষ্টিসীমা হয় ৫০০ মিটার। আর ক্যাটাগরি-৩ প্রযুক্তি সম্বলিত রানওয়েতে দৃষ্টিসীমা ৫০ মিটার থেকে শূন্য মিটার পর্যন্ত হয়। ক্যাটাগরি-১ উড়োজাহাজ অবতরণের সময় ৮০০ মিটারের কম দৃষ্টিসীমা থাকে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ২০২২ সালে আইএলএস সিস্টেম ক্যাটাগরি-২ উন্নীত করতে কাজ শুরু করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ঘন কুয়াশায় ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণে যখন সমস্যা দেখা দেয়, তখন বেবিচক এ বছরের মধ্যেই আইএলএস আধুনিকায়ন কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছিল। বছর শেষ হতে চললেও সেই কাজ শেষ করা যায়নি। ফলে চালু হয়নি আইএলএস-২। তাই এবার রাত ও ভোরে ফ্লাইট ওঠানামা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ফ্লাইট অবতরণ নিয়ে এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন :
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) শফিউল আজিম বলেন, অনেক অর্থ খরচ করেও শেষ পর্যন্ত রানওয়ের আইএলএস-২ পদ্ধতির কাজ শেষ হয়নি। ফলে কুয়াশা হলেই ফ্লাইট ডাইভার্ট করতে হচ্ছে। এতে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে একেকটি এয়ারলাইন্স। শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে, যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে দেশের অন্যতম বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলার জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই কুয়াশার জন্য ফ্লাইট বিলম্ব হচ্ছে। এতে ফ্লাইট পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। যাত্রীরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কিন্তু, আবহাওয়ার বিষয়ে তো কারও হাত থাকে না। এটা সারা বিশ্বেই একই, তবে বিমানবন্দরে যদি আইএলএস সিস্টেমসহ প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন করা যেত, এই অবস্থার উন্নতি হতো।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, বুধবার রাত ২টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘন কুয়াশার জন্য ১৩টি যাত্রীবাহী বিমান ফ্লাইট ডাইভার্ট হয়ে কলকাতা, হায়দ্রাবাদ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরবর্তীতে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের পর ডাইভার্ট ফ্লাইটগুলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসতে শুরু করে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, অবতরণ করতে না পারা ফ্লাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে- কুয়েত থেকে আসা জাজিরা এয়ারওয়েজ; ওমানের মাস্কাট থেকে আসা সালাম এয়ার; কুয়ালালামপুর থেকে আসা এয়ার এশিয়া; শারজাহ থেকে আসা এয়ার অ্যারাবিয়া; চীনের গুয়াংঞ্জু ও কুয়ালালামপুর থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইট কলকাতায় যায়। এছাড়া রিয়াদ থেকে আসা সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি কুয়াশার আগাম খবরে মাঝপথে হায়দ্রাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এছাড়া, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের শারজাহ, গুয়াংজু ফ্লাইটসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্সের বাকি ফ্লাইটগুলো সিলেট ওসমানী ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।