ক্যাশবিহীন সমাজ, নতুন জীবনধারা

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : একসময় টাকা পাঠাতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। দ্রুত টাকা পাঠাতে পরিচিত জনের মাধ্যমেও সময় লাগত বেশ। কারণ ছিল অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার অভাব। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এসব নিছক গল্প হলেও ব্যাংকিং ব্যবস্থা আসার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। ব্যাংকিং সেবা অবশ্য সবার কাছে সহজলভ্য ছিল না।

ক্যাশলেস সোসাইটি এমন একটি সমাজ ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে, যেখানে নগদ অর্থের কোনো ব্যবহার থাকবে না; থাকবে না ব্যবহারজনিত ঝুঁকি। লেনদেন হবে ডিজিটাল মাধ্যমে। এটি হতে পারে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড কিংবা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার।

বর্তমানে টাকা আদান-প্রদান হোক কিংবা ইউটিলিটি বিল, খাবার অর্ডার দিতেই হোক কিংবা মোবাইল রিচার্জ- সবার আগে মাথায় আসে মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস বা এমএফএসের কথা। এক দশক ধরে এ দেশের শহর থেকে গ্রাম- সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আর্থিক লেনদেন সহজ ও গতিশীল করে তুলেছে এমএফএস। হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে নানা ধরনের সেবা। প্রভাব ফেলেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে, ভূমিকা রেখেছে লেনদেনের পরিমাণ বাড়াতে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে এমএফএস খাত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে আগের বছরের এমএফএস খাতের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের সংখ্যা বেড়েছে ১৫ শতাংশ। অপরদিকে টাকার অঙ্কে বেড়েছে ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষও টাকার পরিবর্তে এমএফএসের ওপর নির্ভর করছে। যা বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের দেশের মতো ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’র দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে বিশ্বাস করেন আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ট্রাস্ট আজিয়াটা ডিজিটাল পে বা ট্যাপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দেওয়ান নাজমুল হাসান।

ট্যাপ সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সঙ্গী হয়ে কাজ করতে চায়। ট্যাপের একঝাঁক তরুণ কর্মী দিনরাত পরিশ্রম করে ডিজিটাল লেনদেন সহজ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সামনে থেকে এই তরুণ-তরুণীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেওয়ান নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘২৫ বছর আগে মানুষ টাকা পাঠাত এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকের মাধ্যমে। আগে ইউটিলিটি বিল ব্যাংক ছাড়া দেওয়া যেত না। এখন আর ব্যাংকে যেতে হচ্ছে না। ২০০৯ সাল থেকে ধাপে ধাপে এ ক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে।’

বাংলাদেশে এমএফএস প্রথম শুরু হয় টাকা পাঠানোর মাধ্যমে। তারপর এসেছে মোবাইল রিচার্জ। চার-পাঁচ বছর আগে ইউটিলিটি বিল দেওয়াও শুরু হয়। মানুষ এখন খাবারের অর্ডার অথবা স্কুলের বেতন দিতেও এমএফএস ব্যবহার করছে।

দেওয়ান নাজমুল বলেন, ‘ঘরে বসেই মানুষ সব করছে, তাদের বাইরে যেতেও হচ্ছে না। এমনকি প্রান্তিক গোষ্ঠীর দোরগোড়ায় আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে এর কল্যাণে। অনেক ক্ষেত্রে নগদ অর্থেরও প্রয়োজন হচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে অল্প সুদে ঋণ সুবিধা, যা দিয়ে পুুঁজিহীনরা ব্যবসা করে নির্ধারিত মেয়াদে ঋণের টাকা পরিশোধ করে নিজেদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারছেন।’ এভাবে বাংলাদেশ বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ‘বাংলা কিউআর’ কোড পেমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছে, যা ক্যাশলেস সোসাইটির অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মেলাতে এগিয়ে রাখবে আরও এক ধাপ। ট্যাপের সিইওর বিশ্বাস, এটি দেশের লেনদেন ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।

প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে : বর্তমানে চোর, ছিনতাইকারীর কাছ থেকে টাকা নিরাপদ হলেও এমএফএস সার্ভিস অনেক সময় নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টকারীকেই দায়ী করেন দেওয়ান নাজমুল। তাঁর মতে, গ্রামে অনেক গ্রাহক পিন নম্বরের গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারেন না। ফলে সহজেই প্রতারণার শিকার হন। তবে ট্রাস্টের এমএফএস সার্ভিস ‘ট্রাপে’ ডিভাইস ব্যান্ডিং করা হয়। তাই কেউ যদি পিন শেয়ারও করেন, তা অন্য ফোনে ব্যবহার করা যাবে না। ট্যাপের সিইও জানান, সতর্ক থাকলে এসব প্রতারণা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

দেওয়ান নাজমুল বলেন, ‘বাংলাদেশে এমএফএস কোম্পানি শুধু নিজেরাই ব্যবসা করছে তা নয়। প্রতিটি কোম্পানির এক-দুই লাখ ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে। এর মাধ্যমে তাঁদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ফলে ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে। স্বচ্ছ ও সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ থাকলে নতুন সেবা নিয়ে এমএফএস সার্ভিস ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় অসামান্য ভূমিকা রাখবে।’

Share