নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ফোন চুরির অভিযোগে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের দেহ তল্লাশি করে আটকে রাখায় অভিনেত্রী শমী কায়সারকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে দুইটি স্মার্টফোন হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের ‘চোর’ সম্বোধন করার পাশাপাশি প্রায় আধাঘণ্টা তাদের আটকে তল্লাশি করেন শমী কায়সারের নিরাপত্তাকর্মী।
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক নিয়ে আসা লাইটিংয়ের এক কর্মী শমী কায়সারের স্মার্টফোন দুটি নিয়েছেন। এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন এই অভিনেত্রী।
এদিকে শমী কায়সারের মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের ‘চোর’ সম্বোধন করার কড়া সমালোচনা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদকর্মীরা। তাদের মধ্যে কেউ শমী কায়সারকে ক্ষমা চাইতে বলেন। তিনি ক্ষমা না চাইলে তাকে বয়কটের ঘোষণাও দেন অনেকেই। কেউবা বলেন, এ ভুল ক্ষমার অযোগ্য, তাকে প্রেস্ক্লাবে নিষিদ্ধ করা হোক। কেউ জানান, টাকা ও ক্ষমতার জোরে শমী কায়সার সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক ও কলামিষ্ট পীর হাবীব লিখেছেন, ‘শমী কায়সারকে সাংবাদিক সমাজের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতেই হবে, নয় তাকে বয়কট করতে হবে। অভিনেত্রী ও ব্যবসায়ী শমী কায়সার জাতীয় প্রেসক্লাবে বসে পেশাগত দায়িত্বপালনরত সংবাদকর্মীদের আটকিয়ে নিজের দুটি স্মার্টফোন চুরির অভিযোগে নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে দেহ তল্লাশিই করাননি, তারা সংবাদকর্মীদের চোরও বলেন! পরে প্রকৃত চোর ধরা পরলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন’।
দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধ শেখ মামুনুর রশিদ লিখেছেন, ‘একজন সাংবাদিক অভাবী হতেই পারে । বেতন নিয়মিত না পাওয়ায় কিংবা বেকারত্বের কারণে সে কষ্টে থাকে। বাসা ভাড়া, বাচ্চার স্কুলের বেতন, বউয়ের বায়না মেটানো, বাবা-মা-ভাই-বোনের আবদার পূরণে তার সক্ষমতা কম থাকতেই পারে। হয়তো কেউ কেউ উপায় না পেয়ে দুই চার আনা আয়ের বিকল্প ধান্দাও করে । তাই বলে সে ‘চোর’ আমি অন্তত বিশ্বাস করি না। চোর কারা, চরিত্রহীন কারা, ধান্দাবাজ, দলবাজ, সুযোগসন্ধানী কারা- সমাজের মানুষ জানে’।
এছাড়াও বাসস সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় ও শীর্ষস্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা তাকে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের প্রায় সকলেই তার এই অশোভন কাজের প্রতি ধিক্কার জানিয়েছেন।
এর আগে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন শমী কায়সার। প্রায় অর্ধশত ফটো ও ভিডিও ক্যামেরা এবং শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতেই এক পর্যায়ে চুরি হয় শমী কায়সারের দুইটি স্মার্টফোন। ই-কমার্সভিত্তিক পর্যটনবিষয়ক সাইট ‘বিন্দু৩৬৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষ করে কেক কাটার সময় হঠাৎ করেই তিনি জানান, তার স্মার্টফোন দুইটি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সে সময় ফোন দুটিতে কল দিয়ে সচল পাচ্ছিলেন তিনি।
অনুষ্ঠান থেকে ফোন চুরি যাওয়ায় প্রায় অর্ধশত সংবাদকর্মীকে আধ ঘণ্টারও বেশি আটকে রাখেন শমী কায়সার। তার নিরাপত্তাকর্মী সংবাদকর্মীদের দেহ তল্লাশিও করেন। তল্লাশির পর অনেকে বের হয়ে যেতে চাইলে সংবাদকর্মীদের ‘চোর’ বলে ওঠেন সেই নিরাপত্তাকর্মী। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সংবাদকর্মীরা। অনুষ্ঠানস্থলেই তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তবে পরবর্তীতে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক নিয়ে আসা লাইটিংয়ের এক কর্মী স্মার্টফোন দুটি নিয়ে গেছেন। তারপর সাংবাদিকদের প্রতি ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেন শমী কায়সার। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। মুঠোফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে’। এই পরিস্থিতিতে প্রধান অতিথি আসার আগেই অনুষ্ঠান সমাপ্ত করেন আয়োজকরা।
ঘটনায় শমী কায়সার বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তার ফেসবুক পেজে লেখেন,
‘গতকালের (২৪/০৪/১৯) ঘটনা এবং প্রিয় সাংবাদিক ভাইদের উদ্দেশ্য আমার কিছু কথা: ই-কমার্সভিত্তিক পর্যটন বিষয়ক সাইট বিন্দু৩৬৫ এর উদ্বোধনকালে বক্তব্য দিতে যাই আমি। বক্তব্য শেষ করে কেক কাটার সময়ই হঠাৎ দেখি- আমার স্মার্টফোন দু’টি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ফোন দু’টিতে কল দিয়ে তখনো সচল পাচ্ছিলাম। আসলে মুঠোফোন আমাদের সবার জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে সেখানে।
আমার এমন মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই মিলনায়তনের মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে আমার নিরাপত্তাকর্মী সবার দেহ তল্লাশি করতে চাইলে তাতে সম্মতি জানান উপস্থিত প্রিয় সংবাদকর্মী ভাইয়েরা। তখন কেউ কেউ তল্লাশিসাপেক্ষে বের হতে চাইলে, ‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী’ তাদের লাইনে সিরিয়ালি দরজার দিকে আসতে বলেন। এক সময় তার সাথে সাংবাদিক ভাইদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়, সে হয়তো কিছু বলে ওঠে।
এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে আসা সাংবাদিক ভাইয়েরা। এসময় অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হয় সাংবাদিক ভাইদের। আমি স্বাভাবিক ভাবেই খুব আপসেট ছিলাম, কিন্তু আমি এমন কোনো অসম্মানজনক বক্তব্য দেইনি।
পরে কিছু সাংবাদিক ভাইদের ক্যামেরায় কিছু চলমান ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক নিয়ে আসা লাইটিংয়ের এক কর্মী স্মার্টফোন দুটি নিয়ে গেছে। এরপর আমি উপস্থিত সাংবাদিক ভাইদের প্রতি ‘দুঃখ প্রকাশ’ করি সাথে সাথে এবং প্রিয় সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে, যা আমার অনিচ্ছাকৃত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি নিজেও একজন প্রথিতযশা দেশবরেণ্য সাংবাদিকের সন্তান। অন্য কোনো উদ্দেশ্য আমার কখনো নেই এবং ছিল না। ধন্যবাদ’।