খাস জমিতে নির্মিত গোলাম মাওলা রনির ভবন উচ্ছেদ

পটুয়াখালী সংবাদদাতা : পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির বাস ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

জেলার গলাচিপা উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের উলানিয়া বন্দরে ৫ শতাংশ সরকারি খাস জমি ওপর নির্মিত এ ভবনটি মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ভাঙা শুরু হয়। এ সময় ওই ভবনে গোলাম মাওলা রনির ছোট ভাই গোলাম সরোয়ারসহ তার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানরা ছিলেন। পরে প্রশাসনের অনুরোধে তারা ঘরের আসবাবপত্রসহ অন্য মালামাল নিয়ে বের হয়ে যান।

এ উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল কাইয়ুম।

উচ্ছেদ অভিযানে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিষ কুমার ও গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম শওকত আনোয়ারও উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, গোলাম মাওলা রনি ২০০৭-০৮ অর্থবছরে গলাচিপা উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের উলানিয়া বাজারে শর্তসাপেক্ষে ৫ শতাংশ সরকারি জমি বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। তার নিজের নামে, স্ত্রী কামরুন নাহার রুনু, বাবা শামসুদ্দিন মুন্সী ও মা মনোয়ারা বেগমের নামে এ জমি বন্দোবস্ত নেন। কিন্তু লিজের শর্ত ভঙ্গ করে গোলাম মাওলা রনি ওই সরকারি খাস জমিতে দুই তলা পাকা ভবন নির্মাণ করেন এবং ওই ভবনের নিচতলায় মার্কেট ও উপর তলায় আবাসিক করা হয়। গোলাম মাওলা রনি গলাচিপা আসলে এ ভবনটিতে থাকতেন। বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে গলাচিপা উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে তাকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়। সর্বশেষ গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশীষ কুমারের সই করা গত ১৩/০৬/২০২২ তারিখে দেওয়া এক চিঠিতে শর্ত ভঙ্গের কারণে কেন এই স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদ পূর্বক সরকার বরাবরে বাজেয়াপ্ত করা হবে না, তা সাত দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য গোলাম মাওলা রনিকে বলা হয়। কিন্তু তারা সন্তোষজনক জবাব দেননি। এর ফলে স্থানীয় প্রশাসন মঙ্গলবার গোলাম মাওলা রনির এই অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে গোলাম মাওলা রনি বলেন, আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ আবেদনই করিনি, তাহলে আমাদের নামে বন্দোবস্ত কেস আসলো কীভাবে ? আর প্রশাসন বলছে, আমি সংসদ সদস্য থাকাকালীন এ বন্দোবস্ত নিয়ে এ পাকা ভবন করেছি। অথচ এখানে পাকা ভবন নির্মিত হয়েছে ২০০১ সালের দিকে। মূলত আমার বাবা ১৯৬০ সালের দিকে উলানিয়া এলাকায় ওই জমিতে বাড়ি করেন এবং ২০০১ সালে পাকা ভবন করেন। ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করার পর থেকে আমার এ ভবন ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা শুরু হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি উচ্চ আদালতে রিট করি। যার শুনানি প্রক্রিয়াধীন। আমি এ বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হব।

উচ্ছেদ অভিযানের দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার আবদুল কাইয়ুম জানান, সরকারি জমিতে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অংশ হিসেবে এটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এখানে কোনো বিশেষ ব্যক্তির স্থাপনা ভেঙে ফেলা হচ্ছে না। উলানিয়া বাজারে অন্তত ২০টি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে।

গোলাম মাওলা রনি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম মাওলা রনি বিএনপি থেকে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন এবং পরাজিত হন। গোলাম মাওলা রনির মূল বাড়ি ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায়।

Share