খেলতে গিয়ে ফাঁস নয় বাবা ও সৎমা শ্বাসরোধে হত্যা করে ইকরাকে

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : চার মাস আগে রাতে গোপনে দাফনের চেষ্টা করা শিশু আকিলা ওসমান ইকরা খেলতে গিয়ে ফাঁস লেগে মারা যায়নি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ‘ফাঁস লেগে মৃত্যুর’ নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। আর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন স্বয়ং শিশুটির বাবা, সৎমা ও মামা। মৃত্যুর পর অপমৃত্যু মামলা নথিভুক্ত করেছিল থানা পুলিশ। ময়নাতদন্তে ‘শ্বাসরোধে হত্যা’ প্রমাণিত হওয়ায় এটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়েছে। শিশুটিকে হত্যার বিচার চেয়েছেন তার নানি ও প্রবাসী মা। তাদের দাবি, ইকরাকে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে হত্যা করা হয়েছে। ইকরা নগরের পোস্তারপাড় আছমা খাতুন সিটি করপোরেশন বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

ইকরার মৃত্যুর পর তার বাবা ও সৎমা দাবি করেছিলেন, মেয়েটি জানলার গ্রিলের সঙ্গে ওড়না দিয়ে দোলনা বানিয়ে খেলতে গিয়ে ফাঁস লেগে মারা যায়। তবে মেয়েটির নানার অভিযোগ ছিল, তার বাবা ও সৎমা মেয়েটিকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করত। এবারও নির্যাতন করে হত্যা করেছে। ঘটনার পর পরই মেয়েটির সৎমাকে আটক করেছিল পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার আর রেহাই পাননি তিনি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- ইকরার বাবা ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট ১ নম্বর সুপারিওয়ালাপাড়ার রফিক সওদাগরের বাড়ির ওসমান ফারুক বিবলু, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, শিরিনের ভাই চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া গ্রামের কাঞ্চনপাড়ার মো. মুছা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, শিশুটির মৃত্যুর পর পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়নি। গোপনে দাফনের চেষ্টা করেছিল পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। কয়েক দিন আগে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেয়েছি। সেখানে শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর পরই অভিযান চালিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে হত্যার কারণ বের করার চেষ্টা করা হবে।

২০০৫ সালে চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী ফকিরপাড়ার বহদ্দার বাড়ির মো. মহিউদ্দিনের মেয়ে রাজিয়া সুলতানা আঁখির সঙ্গে বিয়ে হয় ওসমান ফারুকের। ২০০৭ সালে তাদের সংসারে আকিলা ওসমান ইকরার জন্ম হয়। পারিবারিক মনোমালিন্যের জেরে ২০১৪ সালে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে অন্যজনের সঙ্গে বিয়ে হয় আঁখির। তিনি বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরব প্রবাসী। ইকরা তার বাবার সঙ্গে থাকত। ২০১৬ সালে ওসমান শিরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। এরপর শিশুটিকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন সৎমা শিরিন আক্তার। এতে তার বাবা ওসমান ফারুকও মাঝেমধ্যে অংশ নিতেন। গত ৭ জুলাই শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তারা।

মেয়েটির বাবা ও সৎমা তখন পুলিশকে জানিয়েছিলেন, গ্রিলের সঙ্গে ওড়না দিয়ে দোলনা বানিয়ে খেলতে গিয়ে ফাঁস লেগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে ইকরা। তাকে উদ্ধার করে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি পুলিশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় ওই দিন রাত ২টার দিকে মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। পরদিন বিকেল ৩টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চার মাস পর গত ১০ নভেম্বর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পায় পুলিশ। প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ফারহানা রহমান শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওই দিনই শিশুটির নানি হাসমত আরা কহিনুর বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ইকরার মামাতো নানা নুর মোহাম্মদ বলেন, বিভিন্ন সময় সৌদি প্রবাসী মা ইকরাকে ফোন করলে সৎমা ও বাবার শারীরিক নির্যাতনের কথা জানাত সে। তার দাদি এ দু’জনের নির্যাতন থেকে নাতনিকে আগলে রাখার চেষ্টা করতেন। তিনি বয়স্ক হওয়ায় নাতনিকে বাঁচাতে পারেননি।

Share