খেলাপি ঋণ ২ লাখ কোটি টাকা

ছয় মাসে বাড়লো ৬৬ হাজার কোটি টাকা

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : খেলাপি ঋণ গোপন করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে আগের সব রেকর্ড ভেঙে গেল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেড়ে প্রথমবারের মতো ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিন মাস আগে গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা ছিল ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। এপ্রিল-জুন সময়ে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে সুশাসনের অভাব ও খেলাপি ঋণই বর্তমান ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা ছিল। ব্যাংক খাতে সুশাসন না থাকার কারণে দিন দিন খেলাপি বেড়েছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় ঢালাওভাবে ছাড় দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের তথ্য গোপনেরও একটি প্রচেষ্টা ছিল। সবমিলিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খেলাপি তথ্য গোপন না করায় হঠাৎ এই সূচকে বড় লাফ দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশে বর্তমানে মোট ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ৩ মাস আগে মার্চ শেষে এই ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসের ব্যবধানে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ৬৫ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বা ৪৫ দশমিক ১৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য বলছে, জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকাই খেলাপি। যা বিতরণকৃত ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রাষ্ট্রের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা বা বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ

গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর মানে বছরের প্রথম তিন মাসে বেড়েছিল ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। জুন শেষে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মানে মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ খেলাপি।

Share