গোলাবারুদসংকটে বাখমুত থেকে সেনা প্রত্যাহারের হুমকি ভাগনার প্রধানের

নয়াবার্তা ডেস্ক : ইউক্রেনের বাখমুত শহরে রুশ বাহিনী ও ইউক্রেনের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক লড়াই চলছে কয়েক মাস ধরে। এই লড়াইয়ে রাশিয়ার হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশটির বেসরকারি ভাড়াটে বাহিনী ভাগনার। কিন্তু সেখানে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত গোলাবারুদ পাচ্ছে না ভাড়াটে এই রুশ সেনাদল। কিছুদিন ধরেই ভাগনারপ্রধান ইয়েভজিনি পিগ্রোশিন এমন অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। গোলাবারুদের সংকটের মধ্যে এবার তিনি বাখমুত থেকে সেনা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছেন। আজ শুক্রবার এই হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি রুশ সেনাপ্রধানকে ভর্ৎসনাও করেন প্রিগোশিন।

বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে প্রিগোশিন বলেন, ‘১০ মে আমরা বাখমুতের অবস্থান থেকে ভাগনার সেনাদের সরিয়ে নিয়ে আসব এবং সেসব অবস্থান (রাশিয়ার) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেব। যুদ্ধের ময়দান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে পেছনে থাকা শিবিরগুলোয় ফিরব, যাতে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি।’

প্রিগোশিন আরও বলেন, ‘আমি বাখমুত থেকে ভাগনারের সেনাদলকে প্রত্যাহার করব, কারণ, গোলাবারুদসংকটের কারণে তাঁদের নির্বোধের মতো প্রাণ বিসর্জন দিতে হচ্ছে।’ বাখমুত থেকে ‘সেনা প্রত্যাহারের আদেশের’ অপেক্ষায় আছেন বলেও জানান প্রিগোশিন।

রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে নেতৃস্থানীয় একটি ভূমিকা রাখছেন ভাড়াটে ভাগনার যোদ্ধারা। বিশেষ করে উত্তর ইউক্রেনের শহর বাখমুত দখলের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত বাখমুত নিয়ে সবচেয়ে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে।

এর আগে টেলিগ্রামে প্রিগোশিনের পোস্ট করা একটি ভিডিও চিত্রে ভাগনার যোদ্ধাদের লাশের সারি দেখা যায়। ওই ভিডিও চিত্রে তাঁকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু এবং রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভের কঠোর সমালোচনা করতে দেখা যায়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের এমন সমালোচনা নজিরবিহীন।

ওই ভিডিও চিত্রে সামরিক পোশাক পরিহিত ভাগনার সেনাদের লাশের সারির পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষুব্ধ প্রিগোশিনকে বলতে শোনা যায়, ‘সোইগু! গেরাসিমভ! আমার পাওনা গোলাবারুদগুলো কোথায়? তাঁরা (ভাগনারের যোদ্ধারা) এখানে এসেছিলেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এবং এখন তাঁরা মরছেন। আর আপনারা নিজ নিজ কার্যালয়ে বসে আরাম করছেন।’

গোলাবারুদ না পাঠানোর জন্য সেনাপ্রধানের সমালোচনা করে প্রিগোশিনকে বলতে শোনা যায়, ‘এঁরা (মৃত সেনারা) ভাগনারের। তাঁরা আজই মারা গেছেন। তাঁদের রক্ত এখনো তাজা। প্রয়োজনের তুলনায় ৭০ শতাংশ গোলাবারুদের সংকটে আছি আমরা। আর আপনি বিলাসবহুল ক্লাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’ মৃত ভাগনার সেনাদের লাশ দেখিয়ে প্রিগোশিন বলেন, ‘আপনি কি মনে করছেন, তাঁদের (ভাগনার সেনাদের) জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে আপনাকে?’

গত সপ্তাহে রাশিয়ার যুদ্ধপন্থী এক ব্লগারকে সাক্ষাৎকার দেন প্রিগোশিন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাখমুতে ভাগনার সেনাদের কাছে যে বুলেট আছে, তা দিয়ে আর কয়েক দিন লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। হাজার হাজার গোলাবারুদ প্রয়োজন তাঁদের। এই সংকট দ্রুত নিরসন না করা হলে তাঁর ভাড়াটে সেনাদল হয় বাধ্য হয়ে পিছু হটবে, নয়তো সেখানে থাকলে মরতে হবে। আমাদের আমলাদের চাওয়ায় তখন কিছু হবে না। সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।’

ভাগনারপ্রধান প্রিগোশিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তাঁদের দুজনের জন্ম রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ওই শহরেই তাঁদের দুজনের রাজনীতি ও ব্যবসাজীবনের শুরু। এ জন্যই পুতিন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেওয়ার পর ভাগনারের সেনাদের নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রিগোশিন।

তবে গোলাবারুদ সরবরাহ নিয়ে সংকটের কারণে প্রিগোশিন একাধিকবার রুশ সামরিক বাহিনীর নেতাদের অবস্থান ও তাঁদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। প্রকাশ্যে রুশ সেনাবাহিনী নিয়ে এ ধরনের সমালোচনা তেমন একটা দেখা যায় না।

Share