চান্ডিমাল–ডিকভেলা হতাশ করলেন বাংলাদেশকে

ক্রীড়া প্রতিবেদক : তিন সেশন-যা করার এর মধ্যেই করতে হবে। যা করার বলতে শ্রীলঙ্কার ৮টি উইকেট ফেলতে হবে, এরপর হাতে যেটুকু সময় থাকে, এর মধ্যে যদি লক্ষ্য তাড়া করে জেতা যায়! চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে আজ বাংলাদেশের হিসেবটা ছিল এ রকমই!

কেউ হয়তো বলতে পারেন-ধুর, টেস্ট ম্যাচে এটা সম্ভব নাকি-তিন সেশনের মধ্যে প্রতিপক্ষের ৮ উইকেট নিয়ে লক্ষ্য তাড়া করে কোনো দল জিতবে! কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট বলেই তো এটা সম্ভব হলেও হতে পারে। আর বাংলাদেশ দল তো সেই সম্ভাবনা বলতে গেলে জাগিয়েও ছিল। কিন্তু দিনেশ চান্ডিমাল ও নিরোশান ডিকভেলার ঠান্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে মুমিনুল হকদের।

আগের দিন, মানে চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৬৮ রান পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কা। ৩৯ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে বিপদেও পড়ে তারা। শ্রীলঙ্কাকে বিপদে ফেলায় বড় ভূমিকা রাখেন তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার ওশাদা ফার্নান্ডোকে রান আউট করার পর তিনি তুলে নেন নাইটওয়াচ ম্যান লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকেও।

আজ পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনেও বাংলাদেশ দলে আশার একটা বাতাস বইয়ে দেন তাইজুল। প্রথম সেশনে তিনি তুলে নেন শ্রীলঙ্কার আরও ২ উইকেট। কুশল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় ৪ উইকেটে ১২৮ রান নিয়ে। মেন্ডিসকে ফেরাতে তাইজুল করেছেন অসাধারণ এক বল। আর ম্যাথুসকে আউট করতে নিয়েছেন অসাধারণ এক ফিরতি ক্যাচ।

মেন্ডিসকে ভাসিয়ে দেওয়া গুড লেংথের একটি বলই করেছিলেন তাইজুল। মিডল ও অফ স্টাম্প বরাবর করা তাইজুলের ফ্লাইট বুঝতেই পারেননি মেন্ডিস। ফিরেছেন বোল্ড হয়ে। অনেকক্ষণ ধরেই ম্যাথুস তাইজুলের আঁটসাঁট বোলিংয়ের বিপক্ষে ভুগছিলেন। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন পাল্টা আক্রমণ করার। তাইজুলের মাথার ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলটি গেল তাইজুলের মাথা বরাবর। জোরে আসা সেই বলটি ক্যাচ বানাতে অনেক দ্রুত সাড়া দিতে হয়েছে তাইজুলকে।

ম্যাথুস আউট হয়ে ফেরার সময় শ্রীলঙ্কার লিড ছিল ৬০ রানের। বাংলাদেশের হাতে তখনো প্রায় আড়াই সেশন সময় ছিল। তাই এখান থেকে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারত। দ্বিতীয় সেশনের ১৩ ওভারের মধ্যে শ্রীলঙ্কার আরও দুটি উইকেট ফেলে দিয়ে তেমন কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তাইজুল ও সাকিব আল হাসান।

দ্বিতীয় সেশনের পানি পানের বিরতির আগেই শ্রীলঙ্কার স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ১৬১ রান। তাইজুলের বলে মিড উইকেটে মুমিনুলের দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফিরে যান দিমুথ করুনারত্নে। আর দনাঞ্জয়া ডি সিলভা ফেরেন সাকিব আল হাসানের বলে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ হয়ে।

এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন চান্ডিমাল ও ডিকভেলা। এ দুজনের দৃঢ়তায়ই ৬ উইকেটে ২০৫ রান নিয়ে চা বিরতিতে যেতে পারে শ্রীলঙ্কা। চা বিরতি থেকে ফিরেও একই রকম দৃঢ়তা নিয়ে ব্যাটিং করতে থাকেন তাঁরা দুজন। তাঁদের প্রতিরোধের দেয়ালে আর ফাটল ধরাতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। শেষ পর্যন্ত ১ ঘণ্টা বাকি থাকতেই ড্র মেনে নেয় দুই দল।

ম্যাচ ড্র হওয়ার সময় ২০৪ বলে ৯৯ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন ছিলেন চান্ডিমাল ও ডিকভেলা। ৪ চার ও ১ ছয়ে চান্ডিমাল ১৩৫ বলে করেছেন অপরাজিত ৩৯ রান। আর ডিকভেলা অপরাজিত ছিলেন ৯৬ বলে ৬১ রান করে। ৩৪ ওভার বোলিং করে ৮২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রান করে আউট হওয়া ম্যাথুস।

Share