নয়াবার্তা প্রতিবেদক : নিবন্ধক কার্যালয়ে না গিয়ে মুঠোফোনে দেওয়া যাবে জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য সরকার নির্ধারিত টাকা। আগামী মাস থেকে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি দেওয়ার এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিকাশ, নগদ, রকেট বা যেকোনো একটির মাধ্যমে নিবন্ধনের বিলম্ব ফি দেওয়া যাবে। এ ছাড়া অনলাইনে ব্যাংকের মাধ্যমেও ফি দেওয়া যাবে।
জন্মনিবন্ধনের জন্য গত বছর বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল দুই ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠা ওই দুজন হলেন চাঁদপুরের সাদুল্যাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব জুবায়ের হোসেন ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউপির সচিব তৈয়বুর রহমান। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। শুধু এই দুজন নন, সারা দেশেই জন্মনিবন্ধনে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ এসেছে।
এই বাড়তি টাকা দেওয়া বন্ধ করতেই উদ্যোগ নিয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। মুঠোফোনে টাকা দেওয়া বাস্তবায়িত হওয়ার পরের ধাপে সেবাগ্রহীতাকে আবেদন নিয়ে নিবন্ধকের কার্যালয়ে যেতে হবে না। সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
গত ৮ জানুয়ারি সচিবালয়ে জন্মনিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ–সংক্রান্ত এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম সভাপতিত্ব করেন। ওই বৈঠকে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট থেকে ১৬টি সুপারিশ করা হয়। সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়।
রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন) ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব রাশেদুল হাসান বলেন, নিবন্ধনের জন্য আবেদনের ফি হাতে (ম্যানুয়াল) নেওয়া হয়। এখন আইবাসের সঙ্গে অনলাইনে নিবন্ধন ফি পরিশোধে সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। অর্থ লেনদেনকারী যেকোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের মাধ্যমে একজন আবেদনকারী অনলাইনে আবেদন ফি পরিশোধ করতে পারবেন। এটি শিগগিরই কার্যকর হতে যাচ্ছে।
যেভাবে নিবন্ধন হয় : বর্তমানে দেশ ও দেশের বাইরে মিলিয়ে ৫ হাজার ৫৩২টি জায়গা থেকে জন্মনিবন্ধন করা যাচ্ছে। দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের পাশাপাশি বিদেশের বাংলাদেশি দূতাবাসে অনলাইনের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্র বলছে, শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে কেউ জন্মনিবন্ধন সনদ নিলে তা বিনা মূল্যে করে দেওয়া হয়। ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বিলম্ব নিবন্ধন ফি দেশে ২৫ টাকা, বিদেশে ১ ডলার। ৫ বছর পর করলে ফি দেশে ৫০ টাকা, বিদেশে ১ ডলার। জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য বিলম্ব ফি দেশে ১০০ টাকা, বিদেশে ২ ডলার। অন্যান্য তথ্য সংশোধন এবং বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষায় সনদের নকল সরবরাহের জন্য আবেদন ফি দেশে ৫০ টাকা, বিদেশে ১ ডলার।
২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় দেশে-বিদেশে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধনের এ ফি নির্ধারণ করা হয়।
অথচ সেবাগ্রহীতারা অভিযোগ করেছেন, বিলম্ব জন্মনিবন্ধন বা সংশোধনের ফি পরিশোধ বাবদ তাঁদের ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে।
জন্মনিবন্ধন ও সংশোধনের জন্য এখন অনলাইনে আবেদন করে প্রিন্ট কপি নিয়ে পাশের নিবন্ধক অফিসে যান একজন সেবাগ্রহীতা। সেখানে নির্ধারিত ফির চেয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হয় তাঁদের। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, অনলাইনে আবেদনের সময় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পরিশোধ করা যাবে। এরপর প্রিন্ট কপি নিয়ে নিবন্ধকের কার্যালয়ে যাবেন সেবাগ্রহীতা। এটি বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা চলে যাবে সরকারি কোষাগারে (আইবাস)। আইবাস হচ্ছে সরকারের একটি সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থাপনাপদ্ধতি। এটি মূলত একটি ইন্টারনেটভিত্তিক সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে সরকারের বাজেট ও সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন–ভাতা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের মধ্যে এখন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই সেবা দেওয়ার বিপরীতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কত টাকা ফি দিতে হবে, তা নির্ধারণ করা। ২৫ টাকার বিপরীতে কত, ৫০ টাকার বিপরীতে কত এবং ১০০ টাকার বিপরীতে কত টাকা দিতে হবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
যেখানে–যেখানে সেবাগ্রহীতাকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়, তা নিয়ে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ৮ জানুয়ারির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট থেকে যে ১৬টি সুপারিশ করা হয়, এর ১টি হলো যে অফিস থেকে জন্মনিবন্ধন করা হয়, সেখানেই সংশোধন করার নিয়মটি পরিবর্তন করা। আবেদনকারী যেকোনো স্থান থেকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নিতে পারবেন, এটি নিশ্চিত করা। নতুন উপজেলা, পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হলে নতুন প্রশাসনিক ইউনিটে গেলে জটিলতায় পড়তে হয়। এটিকে সহজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমরা মাঠে গিয়ে দেখেছি, একজন সেবাগ্রহীতা জন্মনিবন্ধন সনদ আনতে কী ধরনের সমস্যায় পড়েন। সেগুলো চিহ্নিত করে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়কে জানিয়েছি। তারা এগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে।’
বর্তমানে দেশে ১৬টি মৌলিক সেবা পেতে জন্মসনদ প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিয়ের নিবন্ধন, ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ব্যাংক হিসাব খোলা, গ্যাস-পানি-টেলিফোন-বিদ্যুতের সংযোগ।