নয়াবার্তা প্রতিবেদক : ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ দেশের সব এলাকার সম্পত্তি নিবন্ধন কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের যে কোনো এলাকায় স্থাবর সম্পত্তি বা জমি ও ফ্ল্যাট হস্তান্তর হোক না কেন মালিকানা অর্জন করতে কর দ্বিগুণ গুনতে হবে।
আর নিবন্ধন কর হিসেবে সবচেয়ে অর্থ গুণতে হবে রাজধানীর গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ সাউথ রোড, মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকা ও মহাখালী এলাকার স্থাবর সম্পত্তির মালিকদের। কেননা এসব এলাকায় সম্পত্তি কিনলে ক্রেতাকে জমি, ফ্ল্যাট বা যে কোনো স্থাপনা নিবন্ধনের জন্য কাঠা প্রতি ৮ শতাংশ বা ২০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ সেটা গুণতে হবে। যা সম্পত্তি কর হিসেবে সর্বোচ্চ।
আয়কর আইন ২০২৩ এর আওতায় উৎসে কর বিধিমালায় নতুন ওই কর নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ২৬ জুন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ৩ জুলাই বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব আদায়ের যে কঠিন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সেটা অর্জন করতে হলে করহার বৃদ্ধি করাটাই স্বাভাবিক বিষয়। আমাদের দৃষ্টিতে এই সেক্টরে প্রচুর রাজস্ব আদায়ের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় সব জমি বা ফ্ল্যাটের বাস্তবিক মূল্য ও দালিলিক মূল্যের মধ্যে ব্যবধান অনেক। যদিও আমরা দালিলিক মূল্য ধরেই কর হার বৃদ্ধি করেছি। এটা অবশ্যই আদায়যোগ্য। আর যারা রাজধানীতে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করার ক্ষমতা রয়েছে, তাদের ওই কর দেওয়ারও সক্ষমতার রয়েছে বলে মনে করি।
আয়কর বিধিমালার ‘সম্পত্তি হস্তান্তর হতে কর আদায় শীর্ষক’ ৬ নম্বর ধারা অনুসারে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি নিবন্ধন কর ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা করা হয়েছে।
এছাড়া গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকা ও জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা এলাকায় ওই কর ৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের যে কেনো পৌরসভার আওতাধীন সম্পত্তি কর ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং বাকি এলাকাগুলোতে ১ শতাংশ থেকে কর বৃদ্ধি করে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দেন। আর ওই প্রস্তাবনা বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
বিধিমালা অনুসারে কোন এলাকার কত নিবন্ধন কর : বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে রাজধানীর গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ সাউথ রোড ও মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকা ও মহাখালী এলাকার জমির মালিকদের নিবন্ধন কর হিসেবে কাঠাপ্রতি (১.৬৫ শতাংশ) জমি, ফ্ল্যাট বা যে কোনো স্থাপনার দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ২০ লাখ টাকা যেটি সর্বোচ্চ সেটা গুণতে হবে।
কারওয়ান বাজার এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১২ লাখ টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ সেটি, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ও সিডিএ এভিনিউ এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৮ লাখ টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা ও গেন্ডারিয়া এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৮ লাখ টাকা যেটি সর্বোচ্চ, ঢাকার উত্তরা, সোনারগাঁও, জনপথ, শাহবাগ, পান্থপথ, বাংলামটর ও কাকরাইল এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১২ লাখ টাকা যেটি সর্বোচ্চ এবং ঢাকার নবাবপুর ও ফুলবাড়িয়া এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৬ লাখ টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ সেটা কর হিসেবে গুণতে হবে।
তবে শর্ত থাকে যে, যদি জমিতে কোনো স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্লোর স্পেস থাকে, তাহলে প্রতি বর্গ মিটারে ৮০০ টাকা হারে অথবা ওই স্থাপনা, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের দলিল মূল্যের ৮ শতাংশের মধ্যে যাহা সর্বোচ্চ সেই হারে অতিরিক্ত কর প্রযোজ্য হবে।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, ঢাকার উত্তরা (সেক্টর-১-৯), খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকা, আজিমপুর, রাজারবাগ পুনর্বাসন এলাকা ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাঁচলাইশ ও নাসিরাবাদ মেহেদিবাগ দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৩ লাখ টাকা যেটি সর্বোচ্চ, ঢাকার বনানী ডিওএইচএস, ধানমন্ডি, বারিধারা ডিওএইচএস, মহাখালী ডিওএইচএস, বসুন্ধরা, নিকেতন ও বারিধারার দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১ লাখ টাকা যেটি সর্বোচ্চ এবং ঢাকার রাজউক পূর্বাচল আবাসিক মডেল টাউন, বসুন্ধরা ও ঝিলমিল আবাসিক এলাকা দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৩ লাখ টাকা যেটি সর্বোচ্চ সেটা গুণতে হবে।
অন্যদিকে ঢাকার উত্তরা, নিকুঞ্জ, বাড্ডা পুনর্বাসন এলাকা, গেন্ডারিয়া পুনর্বাসন, শ্যামপুর পুনর্বাসন, আইজি বাগান ও টঙ্গি এলাকা দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা যেটি সর্বোচ্চ ঢাকার শ্যামপুর, পোস্তগোলা শিল্প ও জুরাইন শিল্প এলাকার দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১ লাখ টাকা যেটি সর্বোচ্চ ঢাকার খিলগাঁও ও রাজারবাগ পুনর্বাসন এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা দেড় লাখ টাকা যেটি সর্বোচ্চ এবং ঢাকার গোরান ও হাজারিবাগ ট্যানারি এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৬০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ সেটা গুণতে হবে।
এছাড়া গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকা ও জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা এলাকায় কর বৃদ্ধি করে দলিল মূল্যের ৩ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশের যে কেনো পৌরসভার আওতাধীন সম্পত্তি কর ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং বাকি এলাকাগুলোতে ১ শতাংশ থেকে কর বৃদ্ধি করে ২ শতাংশ করা হয়েছে।