তথ্য গোপন না কোভিড টিকা না নেওয়া, কেন বাদ পড়েছেন মিথিলা

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : স্থানীয় আয়োজকদের সিদ্ধান্ত ছিলো, ২৮ বছরের নিচে থাকা তরুণীরা মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। এ বছরের ১৩ জানুয়ারিতে নাম নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়ে শেষ হয় ২৫ জানুয়ারি। তার আগে ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে তখন আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো তথ্যমতে, ৩ এপ্রিল গ্র্যান্ড ফিনালে শেষে চ্যাম্পিয়ন হওয়া তানজিয়া মিথিলার এসএসসি সনদ, পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী নাম নিবন্ধনের শেষ দিনে ৩০ বছর হতে বাকি ছিল ৫ দিন! অনুষ্ঠান শেষে বিষয়গুলো সামনে চলে আসায় মিথিলাকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।

বয়সের তথ্য লুকানো এবং এসএসসি সনদ, পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে জন্মনিবন্ধনের তথ্যের মিল না থাকায় মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ হলেও তানজিয়া মিথিলাকে নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। শুরুতে বয়স লুকানোর বিষয়টি সামনে এলে সেটাকে যৌক্তিক মনে করছেন বাংলাদেশি আয়োজক কর্তৃপক্ষ। মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশের পরিচালক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ডেফিনেটলি আমরা মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিথিলার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো শেয়ার করব। ওদের গাইডলাইন অনুযায়ী যে ব্যবস্থা আছে সেটাই গ্রহণ করব। তথ্য গোপনের দায়ে যে শাস্তি হওয়ার দরকার সেটা অবশ্যই হবে।’

মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যে তাঁর বয়স লুকানোর অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়েছ, যাচাই-বাছাই চলছে তা মিথিলাকে অবহিত করা হলে তিনি জানান, এটা যদি প্রমাণিত হয় আর মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যদি কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেয়, তা মেনে নিতে আমি পুরোপুরি প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট, ভোটার আইডি, জন্মনিবন্ধন তো আর কেউ বদলাতে পারবে না। তাঁরা চাইলেও উল্টাপাল্টা কিছু বের করতে পারবে না। এরপরও যদি তারা খতিয়ে দেখে প্রমাণ পায়, তাহলে যে ব্যবস্থা নেবে আমি তা-ই মাথা পেতে নেব।’

কথা ছিল মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ যিনি হয়েছেন সেই তানজিয়া মিথিলা যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার মূল আসরে অংশ নেবেন। ৬ মে ফ্লোরিডায় এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশি আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশে লকডাউন অবস্থা বিরাজমান থাকায় সময় স্বল্পতা ও যথাযথ প্রস্তুতিতে ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের আয়োজক প্রতিষ্ঠান মিথিলার নাম প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানায়। সেই আবেদন মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ গ্রহণও করেছে।’

অন্যদিকে মিথিলা জানান, চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে না পারার অনেক কারণ আছে। প্রথম কারণ, এখনো করোনা ভ্যাকসিন নিতে না পারা। দ্বিতীয়ত, ভিসা ফেসের জন্য যে আবেদন করা হয়েছিল লকডাউনের কারণে ওই তারিখ বাতিল করা হয়েছে। প্রি-প্রোডাকশন ভিডিও তৈরি হয়নি। এমনকি ন্যাশনাল কস্টিউমও তৈরি হয়নি। ভিসা আবেদনের আগে যে কাজগুলো করতে হয়, সেগুলোর কিছুই করতে পারিনি। পরে তো ভিসা অফিস ভিসা ফেসের ডেটই বাতিল করেছে।’

এদিকে, বিউটি পেজেন্টদের নিয়ে কাজ করা ‘সাশ ফ্যাক্টর’ নামের অনলাইন ম্যাগাজিনের ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়েছে, ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০ তানজিয়া জামান মিথিলাকে ঘিরে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেক বাংলাদেশি বিউটি পেজেন্টরা মিথিলাকে নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন এবং তাঁকে মূল প্রতিযোগিতার জন্য সাপোর্ট করছেন না। এ কারণে মিস ইউনিভার্স ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তার নাম।’

মিথিলার পাসপোর্ট, এনআইডি, জন্মনিবন্ধন ও এসএসসি সনদ আমাদের কাছে আছে। যাচাই বাছাই শেষে দেখা যায়, একটির সঙ্গে আরেকটির তথ্যে মিল নেই। কোনোটিতে নামের বানান ভুল থাকলেও কোনোটিতে জন্মের বছরে গরমিল। নথিপত্রগুলো হোয়াটসঅ্যাপে মিথিলার কাছে পাঠালে এসব তাঁর বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এর আগে ১০ এপ্রিল বয়স লুকানো অভিযোগ নিয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়ে মিথিলা জানান, সবাই গুগল করে বলছেন আমার বয়স ২৮ বা ২৯ বছর, জন্ম ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯২। এটা মিথ্যা কথা। আমার পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন ও ভোটার আইডি মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ আয়োজকদের কাছে জমা আছে। বয়সের প্রমাণ দিয়েই আমাকে নাম নিবন্ধন করতে হয়েছে। এসব না দিলে আমাকে নিবন্ধন করতে দিত না। আর সার্টিফিকেট কে বা কারা বের করেছে, তা আমি জানি না। এসব নিয়ে ভাবিও না। আমাদের সময়ে সার্টিফিকেট অনেক ভুল থাকত। এই যেমন বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্ম তারিখ। আমার এসএসসির সনদে যে জন্ম তারিখ ও সাল লেখা আছে, সেটা সত্য নয়।’

যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করেছেন। এটা সত্য, নাকি মিথ্যা? জানতে চাইলে মিথিলা বলেন, ‘দিস ইজ রাইট। কিন্তু আমার জন্মনিবন্ধন, ভোটার আইডি, পাসপোর্ট—সবকিছুতে লেখা আছে, ১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে আমার জন্ম।’ তবে মিথিলা দ্বারা সার্টিফায়েড জন্মনিবন্ধনের তথ্যের সঙ্গে ভোটার আইডি ও পাসপোর্টের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে!

তানজিয়া মিথিলা নাম নিবন্ধনের সময় সব নথি জমা দিয়েছেন বললেও মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানালেন, গ্র্যান্ড ফিনালে শেষে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই তাঁরা এসব নিয়েছেন প্রতিযোগীর কাছ থেকে! নিবন্ধনের সময় এসবের প্রয়োজন হয়নি বলেও জানান তিনি।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক অডিশনের সময় একটি জন্মসনদ জমা দিয়েছিলেন মিথিলা। ফরম পূরণের সময় কোনো ডকুমেন্ট দিতে হয়ও না। যখন গ্র্যান্ড ফিনালে হল, তখন তাঁর কাছে অন্যসব ডকুমেন্ট চেয়েছি। আমাদের তখন আরেকটা জন্মসনদ দিয়েছে। দশজনের মধ্যে অনেকের এনআইডি ছিলও না। কেউ জন্মনিবন্ধন দিয়েছে, কেউ এসএসসি সনদ দিয়েছে। মিথিলা আমাদের যেসব নথিপত্র দিয়েছে, এগুলো সঠিক কী না, তা যাচাই বাছাই করব।’

কবে জানা যাবে? ‘জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট কার্যকর কী না এসব দেখছি। জন্মনিবন্ধন এরই মধ্যে অনলাইনে চেক করেছি। বাকিটা সরকারি অফিস খুললে তবেই যাচাই বাছাই করতে পারব।’ বললেন শফিকুল ইসলাম। কিন্তু এখন তো সবই অনলাইনে চেক করা যায় এমন প্রসঙ্গ উঠতেই, ‘জি জি, শুধু পাসপোর্ট করা যায় না। ওটাও করে ফেলব আরকি।’

তথ্য গোপনের বিষয়টি প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না জানতে চাইলে , আমরা মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিতর্কগুলো উঠেছে, এসব নিয়ে আলাপ করব। তথ্য গোপনের দায়ে যে শাস্তি হওয়া দরকার সেটা অবশ্যই হবে।

Share