নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। এজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির কারণে সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। শিশু থেকে শুরু করে সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এর ফলে সমাজে অরাজকতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
স্থানীয় সময় রবিবার বিকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে তিনি গত আট দিনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান, সাধারণ পরিষদে ভাষণ এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন। পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে নিউইয়র্কে কর্মরত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ান ইলেভেনের আর যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এসব অনিয়ম শুরু হয়েছে বহু আগে। জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে তারাই দুর্নীতি প্রশ্রয় দিয়েছে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। দুর্নীতির কারণে সেটা নষ্ট হতে দেয়া যায় না। প্রকল্পের প্রতিটি পয়সা যাতে যথাযথভাবে ব্যয় হয় সেই পদক্ষেপও নেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। জনগণের সঙ্গে আমাদের মিশে চলতে হবে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কুপ্রভাব যাতে দল বা সমাজে না পড়ে সেটা আমাকে দেখতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে কমিটির সভা করে সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছি। কখন কোথায় অভিযান চলবে। আমি নিউইয়র্কে বসেও সব দিক নির্দেশনা দিচ্ছি। তিনি বলেন, সবার জীবনমান উন্নত হোক এটা আমি চাই। কিন্তু অবৈধ পথে কাউকে সম্পদশালী হতে দেয়া যাবে না।
ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, স্পোর্টসকে প্রমোট করার জন্য আমরা নানা সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। কিন্তু এসব সুবিধা ব্যবহার করে এরা যে ক্যাসিনো নিয়ে আসবে ভাবতেও পারিনি। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। তাই পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসছে। আরো কী বের হয় দেখুন। অপেক্ষা করুন, একবার যখন ধরেছি তখন অভিযান অব্যাহত থাকবে। কার মাধ্যমে বা কোন কোম্পানির মাধ্যমে এসব ক্যাসিনো সরঞ্জাম এসেছে তা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। তবে আমি এবার ভালভাবেই ধরেছি।
তিনি বলেন, আমরা প্রথমে জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযান শুরু করেছিলাম। সেখানে আমরা যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। এবার আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলাম।
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি এবং ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঋণখেলাপির প্রচলন জিয়ার আমল থেকেই শুরু হয়েছিলো। এটার প্রচলন এখনো আছে। আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আর শেয়ার বাজার নিয়ে কিছু কিছু লোক খেলা করছে। তবে আমি বলবো- যারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন, তাদের বুঝেশুনে বিনিয়োগ করা উচিত।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার প্রবাসীবান্ধব। প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠালে সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। যাতে তারা সহজে রেমিটেন্স পাঠাতে পারেন। কোনো রকম অসুবিধা না হয় সে ব্যবস্থা নিয়েছে তার সরকার। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছি।
উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটেবিলে বসেন। এসময় শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একটি খাম হস্তান্তর করেন। কী ছিল সেই খামে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে নিতে চিঠি দেওয়ার কথা জানান।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ‘সেইফ জোন’ করার দাবিকে মিয়ানমার ‘অমূলক’ আখ্যায়িত করেছে। মিয়ানমারের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকরা অন্য দেশে রোহিঙ্গা হিসাবে বসবাস করছে। জাতি হিসাবে এটা মিয়ানমারের জন্য লজ্জার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের সৃষ্টি। তাই এ সমস্যার সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে।
ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তখন বিমানের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ইতিমধ্যে প্রায় ১০টি উড়োজাহাজ আমরা কিনেছি। এবার নিউইয়র্কে সরাসরি বিমান চলাচলের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এ ব্যাপারে আইন ও নিরাপত্তা বিষয়েও ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া দেশে আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি। সেখানেও প্রবাসীরা যাতে বিনিয়োগ করতে পারে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান কমিটি বহাল থাকবে। অচিরেই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেওয়া হবে। কানাডা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং স্থায়ী মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূরএলাহি মিনা সংবাদ সম্মেলনের যৌখ সঞ্চালক ছিলেন। জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে প্রতিবছর নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিতে জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আট দিনের সরকারি সফর শেষে ঢাকার উদ্দেশে স্থানীয় সময় রবিবার রাতে নিউইয়র্ক ছেড়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীদের বহনকারী ইতিহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট (ইওয়াই-১০০) স্থানীয় সময় রাত ১১টায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ৯টা) আবুধাবির উদ্দেশে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা ফ্লাইটটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি হয়ে ১ অক্টোবর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।