নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন দেশে করোনাভাইরাসের জিন–নকশা উন্মোচন করেছে। এ কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সমীর সাহা এ কথা জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের জিন–নকশা উম্মোচনের (জিনোম সিকোয়েন্সিং) কাজটি দেশে বড় ধরনের মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন সরকারের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা। তিনি চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সব বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জিনোম হলো জীবের জিনগত বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস বা নকশা। বংশগতির সব বৈশিষ্ট্যই এক বা একাধিক জিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এসব বৈশিষ্ট্যের তথ্য জানার প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো জিন–নকশা উন্মোচন। এ থেকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কৌশল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
এই গবেষণাকাজে সহায়তা করার জন্য সমীর সাহা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গেটস ফাউন্ডেশন ও চ্যান–জাকারবার্গ বায়ো–হাবকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের এই স্ট্রেইন (ধরন) রাশিয়া ও সৌদি আরবে দেখা গেছে। আরও ৫০ থেকে ১০০টির সিকোয়েন্সিং করলে বোঝা যাবে দেশে কোন স্ট্রেইন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এবং তা কত মারাত্মক।
গতকাল মঙ্গলবার গনমাধ্যমে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ শুরু করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠানটি চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন। এই প্রতিষ্ঠান ঢাকা শিশু হাসপাতালের সঙ্গে করোনার নমুনা পরীক্ষায় যুক্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ৬ মে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শুরু করে বলে জানা গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নতুন করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হতে থাকে। একপর্যায়ে সারা বিশ্বে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণক্ষমতা অনেক বেশি। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির গতিপ্রকৃতি জানার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার ল্যাবরেটরিতে এর জিন বিশ্লেষণ হয়েছে। ওষুধ ও টিকাবিজ্ঞানীরাও এই বিশ্লেষণের তথ্য তাঁদের গবেষণায় ব্যবহার করছেন বা করবেন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এখন আর অন্ধকারে থাকতে হবে না। আমরা বুঝতে পারব, এই ভাইরাসটির উৎপত্তি কোথায়।’ তিনি বলেন, নানা কারণে ভাইরাসের জিনে তথা প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। চীনের ও ইতালির ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা এক না–ও হতে পারে। বাংলাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণক্ষমতা কেমন হবে, তার বেশ কিছু ধারণা পাওয়া যাবে এই বিশ্লেষণ থেকে।
অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে একদল গবেষক এই বিশ্লেষণের কাজটি করেছেন। সেঁজুতি অধ্যাপক সমীর সাহার মেয়ে। এই মেয়ে ও বাবাকে নিয়ে বিল গেটসের লেখা প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ১৬ জানুয়ারি ছাপা হয়েছিল। তাতে বিল গেটস লিখেছিলেন, বাবা-মেয়ে দুজনে মিলে এখন বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতের প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি। শিশুমৃত্যু বেশি বিশ্বের এমন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পদশালী দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবার ফারাক কমাতে কাজ করছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা উপাত্ত, রোগনির্ণয়ের সর্বাধুনিক পদ্ধতি এবং সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে টিকাদানকে কাজে লাগাচ্ছেন। তাঁদের গবেষণা শুধু বাংলাদেশেই ব্যবহৃত হচ্ছে না, বরং একই রকম স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও কাজে লাগানো হচ্ছে।