নিরাপত্তা বাহিনীর পুনর্গঠনই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার : আফগান প্রেসিডেন্ট

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : আফগানিস্তানে সম্প্রতি সরকারি বাহিনী ও তালেবানের তীব্র লড়াইয়ের মুখে প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর পুনর্গঠনই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। পাশাপাশি তীব্র লড়াইয়ে বাস্তুচ্যুত হাজারো মানুষকে সহায়তা দেওয়ার উপায় খোঁজা হচ্ছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

আফগান প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ও আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদার সবার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করছি…আলোচনা এখনো চলছে এবং শিগগির এর ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।’

আগেই রেকর্ড করে রাখা এই ভাষণ আজ শনিবার দেশটির সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হয়।

ভাষণে বিস্তারিত উল্লেখ না করে গনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, আপনারা ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। আপনাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই…আর যেন অস্থিরতা, সহিংসতা না বাড়ে এবং আর কেউ যেন বাস্তুহারা না হয়, সেই চেষ্টা করছি।’

গত বুধবার উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-ই শরিফে আশরাফ গনিকে সর্বশেষ দেখা যায়। আজ সকালে এই শহরে তালেবান বহুমুখী হামলা চালায়।

দেশটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর একের পর এক এলাকা দখল করছে তালেবান বাহিনী। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশটির অর্ধেকের বেশি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন ঘটেছে তালেবানের হাতে। অনেক এলাকায় আফগান সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই চলছে। রাজধানী কাবুল দখলের পথে এগোচ্ছে তারা। ইতিমধ্যে কাবুল থেকে মাত্র ১১ মাইল দূরে পৌঁছে গেছে তালেবান বাহিনী।

এই লড়াইয়ের বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘের তথ্যমতে, সংঘাতে শুধু গত মাসেই এক হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে সংঘাতপূর্ণ এলাকা ও শহরগুলো থেকে সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় রাজধানী কাবুলের দিকে ছুটছে।

বিভিন্ন খবরে বলা হয়, বিভিন্ন শহরে তালেবান বিনা বাধায় ঢুকে পড়ে। তারা সরকারি বাহিনীর কোনো বাধার মুখে পড়েনি।এমনকি কোনো কোনো জায়গায় অনেকে তালেবান বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। সম্প্রতি কয়েক মাসের মধ্যে হাজারো পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের চাকরি ছেড়েছেন।কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাঁরা ফিরে আসছেন।তাঁদের পুনরায় প্রশিক্ষণ দিয়ে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত তিন সপ্তাহে পাঁচ হাজার ব্যক্তি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিতে স্বাক্ষর করেছেন। এ ছাড়া এই সপ্তাহের শেষের দিকে দুই হাজার ব্যক্তি স্নাতক শেষ করবেন।

গত মে মাসে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার শুরু হলে দেশটিতে তালেবানের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে।

তালেবান কোনো বিদেশি বাহিনীর ওপর হামলা না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও আফগান সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি নয়। এই পরিস্থিতিতে কাতারের রাজধানী দোহায় আফগান সরকার ও তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা। বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি প্রাদেশিক রাজধানী ও অন্য শহরগুলোতে হামলা বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। আলোচনায় সব পক্ষই আফগান সংকটের কার্যকরী রাজনৈতিক সমাধানের দাবি জানায়।

Share