নুরের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্বীকার করলেন সাফাদি

নয়াবার্তা ডেস্ক : সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসরায়েলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদিকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর সাক্ষাৎ করেছেন এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মূলত শুরু হয় এই আলোচনা। বিষয়টি নিয়ে এখনো চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য।

দৈনিক প্রথম আলো ৪ জুলাই মঙ্গলবার এই নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবেদক শেখ সাবিহা আলমের এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে নুরুল হক নুরের সাক্ষাতের বিষয়টি সত্য বলে তুলে ধরা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মেন্দি এন সাফাদি বলেছেন, তার সঙ্গে নুরের সাক্ষাৎ হয়েছিল। গত ২৬ জুন মেন্দি এন সাফাদি মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়ে এসব কথা জানিয়েছেন। তার মুঠোফোন নম্বরটি প্রথম আলো সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি, রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস নামে ফেসবুক পেজ থেকে সংগ্রহ করেছে। প্রতিষ্ঠানের বোর্ড মেম্বার হিসেবে তার নাম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসরায়েলি করপোরেশনস অথরিটিতে নিবন্ধিত।

তবে সাক্ষাতের খবর নাকচ করে দিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর একাধিকবার বলেছেন, এ সবই অপপ্রচার।

২০১৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশে মেন্দি এন সাফাদির নাম প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে ইসরায়েলিদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। শিপন কুমার বসু নামের এক ব্যক্তির মধ্যস্থতায় মেন্দির সঙ্গে আসলামের বৈঠক হয়। তিনি ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আগ্রায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সে সময় মেন্দি ভারত সফর করছিলেন। মেন্দির সঙ্গে সাক্ষাতের খবর বের হওয়ার পর ওই বছরের ১৫ মে আসলামকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক বছর পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। পরে তার বিরুদ্ধে দুদকের দুর্নীতি মামলাসহ একাধিক মামলা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

মোসাদ বিতর্ক : বাংলাদেশের গণমাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মেন্দি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট। তিনি মোসাদের এজেন্ট—এ ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়নি। আবার তিনি যে মোসাদের এজেন্ট নন, সে ব্যাপারেও কোনো তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মেন্দি এন সাফাদিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন ছেপেছে। এসব প্রতিবেদন থেকে তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা গোলান মালভূমি এলাকার বাসিন্দা মেন্দি এন সাফাদি ইহুদি নন। তিনি দ্রুজ ধর্মাবলম্বী। দুবাইয়ে ব্যবসা করেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার ‘ফাইভ ফ্যাক্টস অ্যাবাউট ইসরায়েলি দ্রুজ, আ ইউনিক রিলিজিয়াস অ্যান্ড এথনিক গ্রুপ’ নামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২০১৬ সালে। সেখানে বলা হয়েছে, ইসলাম ও হিন্দুধর্ম এবং গ্রিক দর্শন এই ধর্মের ভিত্তি। প্রতিবেদন বলছে, এই ধর্মের আবির্ভাব ১১ শতকে। সিরিয়া ও লেবাননে দ্রুজ সম্প্রদায়ের ১০ লাখের ওপর মানুষ আছেন। এ ছাড়া ইসরায়েল ও জর্ডানে দ্রুজরা আছেন। ইসরায়েলে মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ দ্রুজ। সংখ্যালঘু আরব হওয়া সত্ত্বেও দ্রুজরা ইসরায়েলে ইহুদিদের মতো সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে থাকেন। সেনাবাহিনীতে দ্রুজদের একটি আলাদা পদাতিক ইউনিট আছে, যেটির নাম ‘হেরেভ’ (তরবারি ব্যাটালিয়ন)।

মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমর্থক। ইসরায়েল ২০১৮ সালে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাস করে। ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের জন্ম হয়। সে সময় ওই অঞ্চলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের নাগরিকত্ব পান। তবে তারা কখনোই নাগরিক হিসেবে সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেননি। নাগরিকত্ব আইনে ফিলিস্তিনিদের আইন করে সম–অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ২০১৯ সালে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই আইনের পক্ষে মেন্দি এন সাফাদি তার অবস্থানের কথা জানান।

মেন্দির সঙ্গে সাক্ষাতের খবরের বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর বলেন, ‘তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। এই অভিযোগ ছয় মাস আগে করা হয়েছিল। তখনো কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে ভাঙন ধরাতে, দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। নুর আরও বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, কেউ টাকাপয়সা দিয়ে লবিং–তদবির করে একটা মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়াতে পারেন। আমি যত দূর জানি, তিনি নিজেও একটি লবিস্ট ফার্ম পরিচালনা করেন।’

Share