পদ্মা সেতুতে ঈদের আগে মোটরসাইকেল চলাচলের দাবি

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : গতকাল বুধবার ছিল পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের চতুর্থ দিন। তবে দ্বিতীয় দিন গত ২৭ জুন সকাল ৬টা থেকে বন্ধ রয়েছে মোটরসাইকেল চলাচল। এখন পণ্য হিসেবে মোটরসাইকেল পিকআপে করে পদ্মা সেতু পারাপার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো আরোহী থাকতে পারবে না মোটরসাইকেলের সঙ্গে। অপর দিকে ফেরিচলাচল বন্ধ থাকায় অনেক বাইকার তাদের মোটরসাইকেল ট্রলারে পার করছেন।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু চালুর প্রথম দিন ২৬ জুন হাজার হাজার মোটরসাইকেল অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সেতুর ওপর থামিয়ে সেলফি তোলা, টিকটকসহ বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা ঘটে। বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানোর ঘটনাও ঘটে। প্রথম দিনেই সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিন জন নিহত হয়। এসব কারণে সেতু কর্তৃপক্ষ ২৭ জুন সকাল ৬টা থেকে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেয়।

সেতু বিভাগ সূত্র থেকে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল আগামী পবিত্র ঈদুল আজহার আগে চালুর সম্ভাবনা কম। ঈদের পর মোটরসাইকেল চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এছাড়া পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের টোল বৃদ্ধি করা যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা আছে। তবে বাইকারদের দাবি ঈদের আগেই পদ্মা সেতুতে আবার মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়া হোক।

এদিকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না, সেতুর নিরাপত্তা বিষয়ে কী ভাবছেন— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি, এটা আমাদের সড়ক বিভাগ চিন্তাভাবনা করছে। অন্যান্য সংস্থাও এটা নিয়ে আলোচনা করছে। আপনারা দেখেছেন পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে আমরা নতুন থানা ভবন করেছি। সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ পুলিশ চলে গেছে। আমরা সব সময় সজাগ আছি, যাতে কোনো নাশকতা কিংবা কোনো ঘটনা সেখানে জন্ম না নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা সেতু চালুর দুই দিনের মাথায় সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এসেছে। টোল প্লাজায় যানজট এবং সেতুতে দুর্ঘটনা এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঈদের আগে ঘরমুখী মানুষ এবং কোরবানির পশুবাহী যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে। ফলে এ সময় মোটরসাইকেল চালু রাখলে যানজট এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

সূত্র আরো জানায়, ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে ঈদের আগেই পদ্মা সেতু চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বর্ষায় নদীতে লঞ্চ, নৌকা ও স্পিডবোট দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। এখন মোটরসাইকেলের কারণে দুর্ভোগ কিংবা দুর্ঘটনা বেড়ে গেলে এটা ফলাও করে প্রচার হবে, যা চাইছে না সরকার। ঈদের পরে মোটরসাইকেল চলাচলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মো. রুপম আনোয়ার জানিয়েছেন, মাত্র তিন দিন গেল আর কয়েকটি দিন অপেক্ষা করি। এরপর মোটরসাইকেল চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজায় দায়িত্বরত বাংলাদেশ সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন, মোটরসাইকেল পণ্য হিসেবে পিকআপে নেওয়া যাবে। কিন্তু যাত্রী বা আরোহীসহ মোটরসাইকেল নিয়ে পিকআপ যেতে পারবে না। কারণ মোটরসাইকেল ও আরোহীরা একসঙ্গে পিকআপে গেলে তারা সেতুতে নামতে পারে। তারা মোটরসাইকেল নামিয়ে সেতুতে চালাবে। এই আশঙ্কায় আমরা যাত্রী ও মোটরসাইকেল একসঙ্গে পার হতে দিচ্ছি না। মোটরসাইকেলের যাত্রীরা আলাদা যাবে। তিনি আরো বলেন, টোল আদায় কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো, কোনো যানজট নেই।

এদিকে সেতুতে যান চলাচলের চতুর্থ দিনে গতকাল পদ্মা সেতুতে গাড়ির চাপ অনেকটা কম ছিল। এতে ব্যক্তিগত, পণ্যবাহী ও গণপরিবহনসহ অন্যান্য গাড়ি সহজেই সেতু পার হয়। শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

মাওয়া প্রান্তে টোল প্লাজার কাছে পদ্মা সেতু উত্তর থানার মোড় থেকে মোটরসাইকেল আরোহীদের সতর্ক করে বিকল্প পথ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনেক মোটরসাইকেল এর পরও টোল প্লাজায় আসছে। সেতুতে ছবি তোলা, থামলে ও গাড়ি থেকে নামলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে টোল প্লাজায় মাইকিং ও টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পদ্মার মাঝখানে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্হিতিতে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা পারাপার হচ্ছেন চালকরা। গতকাল বুধবার সকালে মাঝিকান্দি ঘাট থেকে বেশ কয়েকটি ট্রলারকে মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে শিমুলিয়াঘাটে আসতে দেখা যায়। আবার একাধিক ট্রলার মোটরসাইকেল নিয়ে শিমুলিয়া ঘাট থেকে মাঝিকান্দি ঘাটে যেতে দেখা যায়। একেকটি ট্রলার ১৫ থেকে ২০টি করে মোটরসাইকেল বহন করছে। প্রতিটি মোটরসাইকেল পারাপারে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে চালকদের।

তবে ট্রলারে নদী পাড়ি দেওয়া বাইকাররা জানিয়েছেন, ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এ পথ বেছে নিয়েছেন তারা। তাই ঈদুল আজহার আগে পদ্মা সেতুতে আবার মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান তারা।

শরীয়তপুর সদরের হাফিজুর বেপারী বলেন, ঢাকা থেকে সকালে মোটরসাইকেল চালিয়ে এসে দেখি পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ, ফেরিও বন্ধ তাহলে আমরা কীভাবে যাব? আমাদের তো যাওয়ার উপায় নেই। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পার হতে হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়াঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. ফয়সাল জানান, পদ্মা নদীর মাঝিকান্দি চ্যানেলে নতুন করে ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। ডুবোচরে ফেরি চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।

Share