অধ্যাপক ডা. আতিউর রহমান : মলাশয়ের নানা রোগের মধ্যে সাধারণত বেশি দেখা যায় পাইলস। এর কিছু বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে। ৯০ ভাগ পাইলসের রোগী সার্জারি বা অস্ত্রোপচার ছাড়াই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ভালো হয়ে যায়। যে পাইলস ভেতরে থাকে তা হলো ইন্টারনাল পাইলস, বাইরের দিকে থাকে এক্সটারনাল পাইলস।
উপসর্গ : মলত্যাগের পর ব্যথাহীন রক্তপাত পাইলসের অন্যতম উপসর্গ। পাইলস যদি প্রথম ধাপে থাকে, তবে মলদ্বারে বাড়তি মাংসের মতো কোনো কিছু থাকে না। শুধু মলত্যাগের পর রক্ত যায়।
দ্বিতীয় ধাপের পাইলসে মলত্যাগের পর তাজা রক্ত যাওয়ার পাশাপাশি মলত্যাগের পর মনে হয়, ভেতর থেকে কী যেন একটা বাইরে বেরিয়ে আসে। তবে সেটি এমনিতেই ভেতরে ঢুকে যায়।
তৃতীয় ধাপের পাইলসে মলত্যাগের পর বাড়তি মাংসের মতো বের হওয়া অংশ এমনিতেই আর ভেতরে ঢুকে যায় না; চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়।
চতুর্থ ধাপের পাইলস হলে মলত্যাগের পর বাড়তি যে মাংস বের হতো, সেটি আর ঢুকছে না বলে মনে হয়।
অনেক সময় পাইলসের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। একে বলা হয় থ্রম্বোসড পাইলস।
চিকিৎসা : পাইলসের ধরন বা উপসর্গের ওপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে। অস্ত্রোপচার করতে হবে কি না, তা পরীক্ষা করে চিকিৎসক নির্ধারণ করে থাকেন।
প্রথম ধাপের পাইলসের শুরুতেই রোগী চিকিৎসকের কাছে গেলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের রোগীকে পায়খানা স্বাভাবিক করার জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও পানি পান করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মল নরম করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। যদি ওষুধে কাজ না হয়, তখন বেন্ডিং বা সেক্লরো থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়—যেমন রিং লাইগেশন, ইনজেকশন।
দ্বিতীয় ধাপের পাইলসেও অস্ত্রোপচারের দরকার নেই। কিছু আধুনিক চিকিৎসার সহায়তা নেওয়া হয়।
তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের পাইলসে অস্ত্রোপচারের দরকার হয়। আধুনিক স্টেপলড হেমোরয়ডেকটমিতে বাইরে কোনো কাটাছেঁড়া হয় না, মলত্যাগের পর ড্রেসিং করারও প্রয়োজন হয় না। সাত দিন পর থেকেই রোগী স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারেন।
তবে কারও যদি মলদ্বার একদম বাইরে বের হয়ে আসে এবং ইনফেকশন থাকে, তবে ওপেন হেমোরয়ডেকটমি বা ক্লোজ হেমোরয়ডেকটমি করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. আতিউর রহমান, কলোরেক্টাল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন বিভাগ, ডেল্টা হেলথ কেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা