ফাঁড়িতে নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ, পুলিশ বলছে দুর্বৃত্তদের হামলা

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : সিলেটের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রোববার সকালে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, মৃত্যুর আগে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে আসতে বলেছিলেন ওই যুবককে। পুলিশ বলছে, দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত রায়হান আহমেদ (৩৫) সিলেট নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার মৃত হবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করতেন।
এ ঘটনায় রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আখালিয়া এলাকার সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা রায়হানের ‘হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের’ বিচারের দাবি জানান। এ সময় সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

নিহত রায়হানের মামাতো ভাই আবদুর রহমান বলেন, গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা থেকে বাইরে বের হয়েছিলেন রায়হান। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ ছিল না। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে তাঁর রাত ১২-১টা বাজত। তবে ওই দিন আর বাড়ি ফেরেননি। রোববার ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তাঁর বাবা (সৎবাবা) রফিকুল ইসলামকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আসতে বলেছিলেন রায়হান।

আমরা তার পায়ে একটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখেছি। হাতের কয়েকটি নখ উল্টানো ছিল। তাকে পুলিশই নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার দাবি করছি।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ফোন পেয়ে কিছু টাকা নিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যাওয়ার পর সেখানে এক পুলিশ সদস্য ছিলেন। তিনি সকাল সাড়ে ৯টা-১০টার দিকে ফাঁড়িতে আসতে বলেন। সে সময় ১০ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেছিলেন। ওই পুলিশ সদস্য বলেছিলেন, যাঁরা রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছেন তাঁরা ফাঁড়িতে নেই, সবাই ঘুমিয়ে গেছেন। সে সময় রায়হানের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি। রফিকুল বলেন, ‘যে নম্বর থেকে আমাকে ফোন দেওয়া হয়েছে ওই নম্বর সম্ভবত পুলিশ সদস্যের। ওই নম্বরে এখন যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরছে না।’

রায়হানের মামাতো ভাই আবদুর রহমান জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে যাওয়ার পর রায়হান ফাঁড়িতে নেই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পর রায়হান মারা গেছেন বলে জানা যায়। সে সময় তাঁর লাশ হিমাগারে ছিল।

আবদুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘রায়হানকে পুলিশ নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। তবে পুলিশ বলেছে গণধোলাইয়ে মারা গেছে। তার গায়ে তেমন আঘাতের চিহ্ন নেই। আমরা তার পায়ে একটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখেছি। হাতের কয়েকটি নখ উল্টানো ছিল। তাকে পুলিশই নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার দাবি করছি।’ রায়হানের নামে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি ছিনতাই ও মাদক মামলা রয়েছে, এমন তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

Share