বসলো ৩৪তম স্প্যান, বাকি আর মাত্র ৭টি

নিজস্ব জেলা প্রতিনিধি : ৩৪তম স্প্যান বসানোর ফলে পদ্মা সেতুর ৫ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। রোববার সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৭ ও ৮ নম্বর খুঁটিতে এ স্প্যানটি স্থাপন করা হয়। সম্পূর্ণ সেতু দৃশ্যমান হতে আর মাত্র বাকি রইল ৭টি স্প্যান। এ মাসে আরও একটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সেতু সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

৩৩তম স্প্যান বসানোর এক সপ্তাহের মধ্যে ৩৪তম স্প্যানটি বসানো হলো। সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর মাওয়া প্রান্তের ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ৩৩তম স্প্যান।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, করোনাভাইরাস ও বন্যার কারণে স্প্যান বসানোর কার্যক্রম প্রায় চার মাস বন্ধ ছিল। সবকিছু পাশ কাটিয়ে সেতুর কাজ এখন দ্রুত চলছে। বর্তমানে পদ্মা নদীর স্রোত ও পানির গভীরতা অনুকূলে আসায় একের পর এক স্প্যান বসানোর কাজ চলছে।

তিনি জানান, শনিবার বিকেল মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান-ই’ ভাসমান ক্রেনে করে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের ‘টু-এ ’ নামের স্প্যানটি নির্দিষ্ট পিলারের কাছে যায়। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে পিলারের দূরত্ব খুব বেশি না থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে স্প্যানটি পৌঁছে যায়। খুঁটির কাছে নোঙর করা হয় ভাসমান ক্রেনটি। তবে সময় স্বল্পতা এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে স্প্যানটি বসানো যায়নি। পদ্মা নদীর তলদেশের মাটি উচুঁ-নিচু। তাই নোঙর করা স্প্যানটি বসাতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। আজ সকাল ৬ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত সার্ভে করা হয়। পরে ৮টা থেকে স্প্যানটি তোলার কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ১০টা ৪মিনিটে স্প্যানটি সফলভাবে বসানো হয়।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী ৩০ অক্টোবর ৮ ও ৯ নম্বর খুঁটির ওপর ৩৫তম স্প্যান (স্প্যান ২-বি), ৪ নভেম্বর ২ ও ৩ নম্বর খুঁটিতে ৩৬তম স্প্যান (স্প্যান ১-বি), ১১ নভেম্বর ৯ ও ১০ নম্বর খুঁটিতে ৩৭তম স্প্যান (স্প্যান ২-সি), ১৬ নভেম্বর ১ ও ২ নম্বর খুঁটিতে ৩৮তম স্প্যান ( স্প্যান ১-এ), ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর খুঁটিতে ৩৯তম স্প্যান (স্প্যান ২-ডি), ২ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নম্বর খুঁটিতে ৪০তম স্প্যান (স্প্যান ২-ই) ও সবশেষ আগামী ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর ৪১ নম্বর স্প্যানটি (স্প্যান ২-এফ) বসানোর কথা রয়েছে। সবগুলো স্প্যান মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোড ওয়ে স্লাব। এরই মধ্যে ১ হাজার ৪১টির বেশি রোড স্লাব বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১ হাজার ৫০০টির বেশি স্ল্যাব।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় ৩৪টি স্প্যান। ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৫৫ ভাগ। নদী শাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৫০ ভাগ। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৯৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

Share